সফিকুল ইসলাম রানা: একসময় ছিলো শান্ত নদীর তীরে গড়ে ওঠা এক স্বপ্নের নাম—মোহনপুর পর্যটন লিমিটেড। অথচ ২০২৪ সালে রাজনৈতিক অস্থিরতা ও দুষ্কৃতিকারীদের হামলায় ভেঙে গুঁড়িয়ে যায় সেই স্বপ্নের ঠিকানা। ছিন্নভিন্ন হয়ে পড়ে পর্যটন কেন্দ্রের কাঠামো, ক্ষতিগ্রস্ত হয় কোটি টাকার অবকাঠামো। কিন্তু সেখানেই শেষ নয়। ভাঙনের বুকে দাঁড়িয়ে উঠে এসেছে নতুন মোহনপুর—আরও আধুনিক, আরও সুশৃঙ্খল, আরও স্বপ্নময়। আজ, সেই পর্যটনকে ঘিরেই উৎসবমুখর পরিবেশ। মেঘনার পাড়ে গড়ে ওঠা এই ‘মিনি কক্সবাজার’ এখন প্রতিদিন হাজারো পর্যটকের পদচারণায় মুখর। ধ্বংসের ছাই থেকে পুনর্জন্ম; ২০২৪ সালে কিছু দুর্বৃত্ত রাজনৈতিক সহিংসতার সুযোগ নিয়ে মোহনপুর পর্যটন কেন্দ্রের বড় একটি অংশে হামলা চালায়। ভাঙচুর করা হয়, দ্যা সিপ ইন ফাইভ স্টার রেস্টুরেন্ট, থিম পার্ক, ভাস্কর্য, চেয়ার-ছাতা, কটেজ ও অন্যান্য অবকাঠামো। স্থানীয়রা হতবাক, পর্যটকরা আতঙ্কিত। কিন্তু আশার আলো নিয়ে আবার এগিয়ে আসেন উদ্যোক্তারা। গত ৫ আগস্ট, হাসিনা সরকার পতনের পর শুরু হয় সংস্কারের মহাযজ্ঞ। মাত্র কয়েক মাসেই অভূতপূর্ব গতিতে ঘুরে দাঁড়ায় কেন্দ্রটি। নতুন মোহনপুরের বিশেষ আকর্ষণ নদীতে স্পিডবোট ও নৌকা ভ্রমণের ব্যবস্থা, শিশুদের থিম পার্ক, মিনি চিড়িয়াখানা, ফুলের বাগান, সৌদি খেজুর বাগান ও হাঁটার জন্য পাথরের পথ, নিরাপত্তায় তিন স্তরের ব্যবস্থা এবং এলিট ফোর্স নিয়োজিত। আফসানা রহমান, এক পর্যটক বলেন, “আমি ভাবতেই পারিনি এত দ্রুত আবার ফিরে আসবে এই জায়গাটা। আগের চেয়ে এখন আরও বেশি সুন্দর, পরিচ্ছন্ন আর নিরাপদ। পরিবার নিয়ে পুরো দিনটা কাটালাম দারুণভাবে।”সাংবাদিক তুহিন ফয়েজ মন্তব্য করেন, “এখানে এখন যে পরিমাণ নিরাপত্তা ও সেবা ব্যবস্থা রয়েছে, তা যেকোনো আন্তর্জাতিক মানের পর্যটন কেন্দ্রে টেক্কা দিতে পারে।”মোহনপুর পর্যটন কেন্দ্রটি এখন আর শুধু একটি পর্যটনকেন্দ্র নয়, এটি একটি প্রতীক—প্রতিকূলতা থেকে পুনরুদ্ধারের প্রতীক। ভাঙনের মুখেও হাল না ছাড়া সাহসী উদ্যোগের গল্প এটি। বাংলাদেশের নদীভিত্তিক পর্যটনের অগ্রগতির পথে এ পর্যটনটি হতে পারে এক অনুকরণীয় দৃষ্টান্ত। মোহনপুর পর্যটন কেন্দ্রের ব্যবস্থাপনা পরিচালক কাজী মো. মিজানুর রহমান মুঠোফোনে জানান, “আমরা থেমে যাইনি। ধ্বংসের পর থেকেই পরিকল্পনা নিয়েছি কিভাবে আরও বড় করে ফিরবো। আল্লাহর রহমতে এবং মানুষের ভালোবাসায় এখন মোহনপুর আগের চেয়েও সমৃদ্ধ, নিরাপদ ও সুন্দর।”তিনি আরও জানান, পুনঃনির্মাণকালে আন্তর্জাতিক মানের কিছু নতুন সংযোজন করা হয়েছে—নতুন কটেজ, শক্তিশালী নিরাপত্তা ব্যবস্থা, উন্নত সড়কপথ, পাবলিক টয়লেট, পোশাক পরিবর্তনের জায়গা এবং পর্যটকদের জন্য আলাদা স্বাস্থ্যসেবা কেন্দ্র। কাজী মিজানুর রহমান জানান, বর্তমানে পর্যটন কেন্দ্রে ৪৫ জন স্থায়ী স্টাফ কাজ করছেন, আর এর বাইরেও শতাধিক মানুষের কর্মসংস্থানের সুযোগ তৈরি হয়েছে।
Leave a Reply