পল্লবী বিশেষ প্রতিনিধি: ভাটারা থানায় হত্যাচেষ্টার যে মামলায় অভিনেত্রী নুসরাত ফারিয়াকে গ্রেপ্তার দেখানো হয়েছে, সেই মামলায় ২০৭ নম্বর আসামি হিসেবে তার বিরুদ্ধে অভিযোগ আনা হয়েছে ২০২৪ সালে বৈষম্যবিরোধী অন্দোলন দমনে সরকারকে আর্থিক সহায়তা দিয়েছেন তিনি। নুসরাত ফারিয়ার জন্য কেন ইম্পর্ট্যান্ট হবে আওয়ামী লীগ সরকারকে অর্থপ্রদান করে ছাত্র-জনতার বিরুদ্ধে হত্যাযজ্ঞ চালাতে ভূমিকা রাখা? এমন কী কী বেনিফিট তিনি পাচ্ছিলেন যে একাজ তার জন্য গুরুত্বের বিষয় হয়ে দাঁড়াবে? আমি তো কোনো কারণ খুঁজে পাচ্ছি না। বরং তার সোশ্যাল মিডিয়া একাউন্টগুলি পর্যালোচনা করে দেখা যায়, কোটা সংস্কার আন্দোলন শুরু থেকে একাধিক পোস্টের মাধ্যমে তিনি শিক্ষার্থীদের প্রতি সমর্থন ও সহানুভূতি জানিয়েছেন। আবু সাঈদকে হত্যার পর তিনি ১৭ জুলাই ফেসবুকে একটি স্ট্যাটাস দেন, ‘কাজের কারণে আমি হাজার মাইল দূরে। কিন্তু আমার হৃদয়ে রক্তক্ষরণ হচ্ছে, আমি কেমন অনুভব করছি তা প্রকাশ করতে পারছি না। সর্বোপরি আমরা মানুষ এই সত্যটি ভুলতে পারি না। দোয়া করি সবাই নিরাপদে থাকুন।’ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় অনুষ্ঠিত শহীদদের গায়েবানা জানাযার ছবি শেয়ার করে ১৮ জুলাই লিখেছেন, ‘জাতি হিসেবে এর চেয়ে দুঃখজনক আর কিছু নেই!’ইন্টারনেট বন্ধ করে দেওয়ায় উদ্বেগ প্রকাশ করে তিনি ১৯ জুলাই ফেসবুকে স্ট্যাটাস দেন, ‘২ দিন হয়ে গেল, বাংলাদেশে ইন্টারনেট নেই। দেশটি বিশ্বের অন্যান্য অংশ থেকে সম্পূর্ণভাবে বিচ্ছিন্ন। খুব অসহায় বোধ করছি।’ ২৩ জুলাই ফেসবুকে লেখেন, ‘৬ দিন হয়ে গেল আমার বাবা-মায়ের সাথে কথা বলিনি। আপনারা সবাই জানেন আমার বাবার অবস্থা তেমন ভালো না। কিন্তু আমি আমার সহকর্মী ছাত্র ভাই এবং বোনের জন্য অনুভব করি। সবার সুস্থতা ও দেশের শান্তি কামনা করছি।’ ৩ আগস্ট কেন্দ্রীয় শহীদমিনারে সরকার পতনের এক দফা আন্দোলনের ছবি শেয়ার করেন। একই রাতে আরেকটি স্ট্যাটাসে বাংলাদেশের প্ল্যাগ ক্যাপশন দিয়ে শহীদমিনারের ছাত্রজনতার জনসমুদ্রের সেই ঐতিহাসিক ড্রোনশ্যুট ছবিটি শেয়ার করেন। জুলাই আন্দোলন দমাতে সরকার বেশ কিছু কৌশল নেয়। প্রতিটি কৌশলই ব্যর্থ হয়। তারমধ্যে একটি কৌশল ছিল চলচ্চিত্র অঙ্গনে কলাকুশলীদের ব্যানার ধরিয়ে দিয়ে রাস্তায় নামিয়ে বিটিভভবন ও মেট্রোরেলে পুড়ানোর বিচার চেয়ে আওয়াজ তোলা। সেখানে উপস্থিতি ছিলো না নুসরাত ফারিয়া। হাসিনার মন্ত্রী আরাফাত-পলক-হাসান মাহমুদ ও ভোট চোর ফেরদৌসের দিকনির্দেশনায় তারকাদের নিয়ে একাধিক হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপ ক্রিয়েট করা হলেও কোথাও নুসরাত ফারিয়ার উপস্থিতি পাওয়া যায়নি। এমনকি অনেক তারকা ও কনটেন্ট ক্রিয়েটরদের দিয়ে সরকারের পক্ষে পেইড পোস্ট দেওয়ালেও সেসবে নুসরাত ফারিয়া পার্টিসিপেট করার নজির নাই। বরং আন্দোলনকারীদের পক্ষেই যে তার সহানুভূতি ছিল, সেটা তার সোশ্যাল মিডিয়ায় ঘাটলে প্রমাণ মেলে। সে নুসরাত ফারিয়া কীভাবে সরকারকে অর্থ সহয়তা প্রদান করতে পারেন জুলাইয়ে হত্যাযজ্ঞ চালাতে, আমার বুঝে আসে না! ইন্টারেস্টিং বিষয় হলো, যে হত্যাচেষ্টা মামলায় নুসরাতকে গ্রেপ্তার করা হলো, সেই একই মামলায় শাওন, রোকেয়া প্রাচী ও সাবা’দেরকে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করা আছে। তারা প্রকাশ্যে ঘুরে বেড়াচ্ছে তাতে গ্রেপ্তারের কোনো বালাই নাই সরকারের। এরা জুলাই হত্যাযজ্ঞে সরকারের পক্ষে বৈধতা উৎপাদন করতে ভূমিকা রেখেছেন তার প্রমাণও আছে। তারপরও তাদের গ্রেপ্তার করতে পারছে না সরকার। দেখলাম প্রেস ব্রিফিংয়ে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা জাহাঙ্গীর আলম বলছেন, ‘তার নামে মামলা থাকলে কী করবেন। যদি ছাইড়া দিলে আপনিই বলবেন ছাইড়া দিছেন। জুলাই গণহত্যায় যারা প্রকৃত অপরাধী তারাই যাতে গ্রেপ্তার হয়, কোনো একটা নিরীহ লোক যেন কোনো অবস্থায়ই শাস্তি ভোগ না করে এ ব্যবস্থা আমরা নেব।’ওয়েল, সরকার প্রকৃত অপরাধীদের ধরতে যদি এতটাই প্রতিজ্ঞাবদ্ধ হন, তাহলে জুলাইয়ের একেকটি হত্যা মামলায় ঢালাওভাবে ৩০০-৪০০ মানুষকে আসামি করে মামলা গ্রহণ না-করতে পুলিশকে কেন নির্দেশনা দিচ্ছে না? মামলা গ্রহণের সময় কেন অধিকতর যাচাই-বাছাই করা হচ্ছে না। একজন মানুষ একটা গুলিতে মারা গেছেন, দেখা যাচ্ছে পাইকারি হারে ৫০০ মানুষকে আসামি করে মামলা দায়ের করা হচ্ছে। এসব পাইকারি মামলার কারণে প্রকৃত অপরাধীই বেনিফিট পাচ্ছেন। এসব বেশিরভাগ মামলার এজাহারে সুনির্দিষ্ট কোনো অভিযোগ থাকে না। ইন্টারেস্টিং বিষয় হলো, যেখানে আসামির সংখ্যা বেশি করে মামলা দায়ের হচ্ছে, এবং পুলিশের উর্ধতন কর্তাদেরও নাম আসতেছে, সেগুলোতেই হস্তক্ষেপ করছে পুলিশ। নিজ বাহিনীর সদস্যদের নাম মামলা থেকে প্রত্যাহার করতে ট্রাই করে। বাদ বাকি যা পায়, তা-ই গ্রহণ করে। আমি কয়েকটি কেইসে এরকম দেখেছি। স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টার কথা অনুসারে নিরীহ (জুলাই হত্যাকাণ্ডে সম্পৃক্ত নয়) কেউ হয়রানি শিকার যাতে না হয় সেদিকে দৃষ্টি রাখবে সরকার। প্রকৃত অপরাধীদের বিরুদ্ধেই সরকার কঠোর হবে। নুসরাত ফারিয়াকে যেভাবে পুলিশ নারী কর্মকর্তারা ঘিরে রেখে বুলেটপ্রুফ জ্যাকেট ও হেলমেট পরিয়ে আদালতে তোলছেন, তাতে হচ্ছে মনে হচ্ছে দাগি কোনো আসামিকে আদালতে তোলা হচ্ছে। সুযোগ পাইলে যেকোনো সময় দৌড়ে মেরে পালিয়ে যেতে পারে! এদিকে জনগণের ভোটাধিকার হরণ করে এক যুগেরও বেশি ক্ষমতা কুক্ষিগত করে রাখা, জুলাই হত্যাকাণ্ডের মদদদাতা পলক, দীপু, ইনুদের কারাগারে করা হচ্ছে আপ্যায়ন। আদালতে তোলা হচ্ছে ডান্ডাবেড়ি পরানো ছাড়া, মাথায় হেলমেট নেই, দু—একজন ছাড়া পুলিশের প্রটোকল নাই। প্রিজনভ্যান থেকে নামতে নামতে হাত নাড়াচ্ছে তারা, হাসছেন, ক্যামরার সামনে কথা বলছেন। নিরাপত্তায় থাকা পুলিশদের দেখে নেওয়ার হুমকি-ধমকি দিচ্ছেন। অথচ স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টার ভাষ্য অনুযায়ী এরা জুলাইয়ে প্রকৃত অপরাধী, এদের বিরুদ্ধে সরকার কঠোর হওয়ার কথা। নুসরাত ফারিয়ার প্রতি মানুষের যে সম্মিলিত ঘৃণা, সেটি শেখ মুজিবুরের বায়োপিকে হাসিনা চরিত্র অভিনয় এবং সিনেমা রিলিজ পরবর্তী কয়েকটি ইন্টারভিউতে হাসিনার ভুয়সী প্রশংসা করে ন্যাকামি করার কারণে। সেটা সমালোচনা (ক্ষেত্রবিশেষে মিমস) পর্যন্ত ঠিক আছে। বাট সিনেমায় অভিনয় করার কারণে যদি জুলাই হত্যাচেষ্টা মামলায় আসামি করে অবিচার করা হয়।
Leave a Reply