মো. ইসমাইলুল করিম নিজস্ব প্রতিবেদক : পার্বত্য জেলা বান্দরবানের পাহাড় ধস এখন রীতিমতো আতঙ্কের নাম। টানা ভারী বর্ষণে পাহাড়ের পাদদেশে বসবাস করা মানুষগুলো পড়ছেন চরম ঝুঁকিতে। বিশেষ করে বর্ষা মৌসুমে জেলার সাতটি উপজেলায় পাহাড় ধসের আশঙ্কা মারাত্মকভাবে বেড়ে যায়।জেলা প্রশাসনের তথ্যমতে, বান্দরবানের বিভিন্ন পাহাড়ের পাদদেশে ঝুঁকিপূর্ণভাবে বসবাস করছেন বহু মানুষ। প্রতি বছর পাহাড় ও টিলা কেটে ঘরবাড়ি নির্মাণ করায় পাহাড় ধসের ঘটনা ঘটছে নিয়মিত। বিগত এক দশকে এসব দুর্ঘটনায় প্রাণ হারিয়েছেন অন্তত ১০৫ জন।জেলা সদর, ইসলামপুর, টাংকি পাহাড়, কালাঘাটা, বনরূপা, বীর বাহাদুর নগর, ফাইতং, গজালিয়া, সরই,লাঙ্গিপাড়াসহ বিভিন্ন এলাকায় হাজার হাজার মানুষ পাহাড়ের পাদদেশে ঝুঁকিপূর্ণভাবে বসবাস করছেন। একই চিত্র দেখা যায় লামা, নাইক্ষ্যংছড়ি, রোয়াংছড়িসহ অন্যান্য উপজেলাগুলোতেও। প্রতি বছর নতুন নতুন বসতি গড়ে ওঠায় ঝুঁকিপূর্ণ এলাকা এবং বসতির সংখ্যা উদ্বেগজনক হারে বাড়ছে।ইসলামপুরের টাংকি পাহাড় এলাকায় বসবাসকারী লামিয়া আক্তার বলেন, ‘কোনো উপায় না থাকায় আমরা বাধ্য হয়ে পাহাড়ের পাদদেশে থাকি। সমতলে জায়গার অভাবে এখানে এসে বসতি গড়েছি।’ বেশি বৃষ্টিপাত হলে আশ্রয়কেন্দ্রে যাবেন বলে জানান তিনি। গত ২০০৬ সালে জেলা সদরে তিনজন, ২০০৯ সালে লামা উপজেলায় শিশুসহ ১০ জন, ২০১০ সালে নাইক্ষ্যংছড়িতে শিশুসহ ১০ জন, ২০১২ সালে ফাইতং ইউনিয়নে ২৮ জন ও নাইক্ষ্যংছড়িতে ১০ জন, ২০১৭ সালে সদরের কালাঘাটায় সাতজন ও রুমা সড়কে পাঁচজন, ২০২১ সালে ছাইঙ্গ্যা ঝিরিতে একই পরিবারের তিনজন, ২০২৩ সালে মা-মেয়ে দুজন, চলতি বছর নাইক্ষ্যংছড়িতে একজন কৃষক পাহাড় ধসে মারা যান।বাংলাদেশ আবহাওয়া অধিদফতরের তথ্যমতে, গত ২৪ ঘণ্টায় বান্দরবানে ১৭৩ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে। আগামী ২৪ ঘণ্টায় চট্টগ্রাম, খুলনা, বরিশাল ও সিলেট বিভাগে ৪৪ থেকে ৮৮ মিলিমিটার পর্যন্ত অতিভারী বর্ষণের সম্ভাবনা রয়েছে। এতে বান্দরবানসহ চারটি পাহাড়ি জেলায় ভূমিধসের ঝুঁকি বাড়ছে। বান্দরবান আবহাওয়া অফিসের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা সনাতন মন্ডল বলেন, ‘মৌসুমি বায়ুর প্রভাবে গত মঙ্গলবার থেকে টানা পাঁচ দিন থেমে থেমে বৃষ্টি হচ্ছে। বৃহস্পতিবার থেকে শুরু হওয়া মাঝারি থেকে ভারী বৃষ্টিপাত আগামী শনিবার পর্যন্ত চলবে বলে পূর্বাভাস রয়েছে।‘বান্দরবান জেলা প্রশাসক শামীম আরা রিনি বলেন, ‘দুর্যোগ মোকাবিলায় গত ১৭ মে থেকে সাতটি উপজেলায় ২২০টি অস্থায়ী আশ্রয়কেন্দ্র খোলা হয়েছে। ইতোমধ্যে জেলা ও উপজেলা প্রশাসন, ফায়ার সার্ভিস, পুলিশ, সিভিল সার্জন, স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন ও এনজিওদের সমন্বয়ে গঠন করা হয়েছে ‘দুর্যোগকালীন জরুরি সেবা কমিটি’। পাহাড়ের পাদদেশে বসবাসকারীদের অস্থায়ী আশ্রয়কেন্দ্রে আশ্রয় নেওয়ার জন্য অনুরোধ জানিয়ে মাইকিং করা হয়েছে।’ তিনি জানান, জরুরি সেবা দেওয়ার জন্য সিভিল সার্জন কার্যালয় ও উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসক এবং প্রয়োজনীয় ওষুধসহ পানিশোধন ট্যাবলেট সরবরাহ নিশ্চিত করা হয়েছে। যেকোনো জরুরি পরিস্থিতিতে ০১৩০৯৭৪৪৯২৩ নম্বরে যোগাযোগের জন্য বলা হয়েছে। জেলা প্রশাসক আরও জানান, পাহাড় কাটা সম্পূর্ণ অবৈধ হলেও কিছু অসাধু ব্যক্তি রাতের আঁধারে পাহাড় কেটে বসতি গড়ে তুলছে। অভিযান চালালে তারা পালিয়ে যায়। প্রশাসন নিয়মিতভাবে মামলা ও অভিযান চালিয়ে যাচ্ছে বলেও জানান তিনি। সচেতন মহলের মতে, এখনই যদি কার্যকর ব্যবস্থা নেওয়া না হয়। তাহলে ভবিষ্যতে আরও বড় ধরনের প্রাণহানির ঘটনা ঘটতে পারে। বিশেষ করে পাহাড়ি এলাকায় জমির কম মূল্য এবং ভূমির অভাবে নিম্নআয়ের মানুষ জীবনের ঝুঁকি নিয়ে বসবাস করছে।