মোঃ সাকিব খান বিশেষ প্রতিনিধি মাগুরা: নড়াইল সদর উপজেলার মাইজপাড়া গরুর হাটে সরকারি নির্ধারিত হারের বাইরে অতিরিক্ত ইজারা আদায় এবং সেনাবাহিনীর সরাসরি সতর্কবার্তা অমান্য করে অর্থ আদায় অব্যাহত রাখার অভিযোগে এক ইজারাদারকে মোবাইল কোর্টের মাধ্যমে ৪০,০০০ টাকা জরিমানা করা হয়েছে। ঘটনাটি স্থানীয়ভাবে শুধু চাঞ্চল্যের নয়, বরং প্রশাসনিক কাঠামোর কার্যকারিতা এবং জনগণের ওপর প্রভাব নিয়েও ভরসার সৃষ্টি করেছে। ৩০ মে বিকেল আনুমানিক ১৭৩০ ঘটিকায় নড়াইল সদর আর্মি ক্যাম্প থেকে সেনাবাহিনীর একটি নিয়মিত টহল দল মাইজপাড়া হাটে নিয়মিত নজরদারির সময় দেখতে পায়, একজন ইজারাদার সরকারি নির্ধারিত হারের বাইরে অতিরিক্ত ইজারা আদায় করছেন। অভিযুক্ত ব্যক্তি এস এম শামসুজ্জামান খোকন (৫০), রূপগঞ্জ বাজার, নড়াইল সদর এলাকার বাসিন্দা। তিনি গরুপ্রতি ১,০০০ থেকে ১,৩০০ টাকা পর্যন্ত আদায় করছেন। অথচ সরকারি হার অনুযায়ী গরুপ্রতি ইজারা ৬০০ টাকা এবং ছাগলপ্রতি ২০০ টাকা নির্ধারিত আছে।প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে অভিযুক্ত ব্যক্তি দাবি করেন, তিনি অনুমোদিত হার অনুযায়ী ইজারা আদায় করছেন—যেখানে এক লক্ষ টাকার বেশি মূল্যের গরুর জন্য টাকা ১,০০০ এবং নিচে হলে ৫০০ টাকা আদায়ের অনুমতি রয়েছে। তবে তিনি কোনো লিখিত অনুমতি বা হার তালিকা দেখাতে পারেননি। স্থানীয় খামারি ও হাট ব্যবসায়ীরা অভিযোগ করেন, তিনি দীর্ঘদিন ধরে গোপনে অতিরিক্ত টাকা আদায় করে আসছেন এবং আদায়ের পর কোনো রশিদ বা প্রমাণপত্রও দেন না।সেনাবাহিনীর পক্ষ থেকে তাকে ঘটনাস্থলেই মৌখিকভাবে সতর্ক করা হয় এবং অননুমোদিত অর্থ আদায় বন্ধ করতে নির্দেশ দেওয়া হয়। এরপর সেনাবাহিনীর টহল দল এলাকা ত্যাগ করে। কিন্তু মাত্র ১০–১৫ মিনিট পরেই স্থানীয় সূত্র থেকে আবার খবর আসে যে, অভিযুক্ত ব্যক্তি পূর্বের মতোই অতিরিক্ত অর্থ আদায় শুরু করেছেন। সেনাবাহিনী পুনরায় হাটে গিয়ে অভিযুক্তকে আটক করে এবং উপজেলা প্রশাসনের সঙ্গে সমন্বয় করে তাৎক্ষণিক মোবাইল কোর্ট পরিচালনার ব্যবস্থা নেওয়া হয়। পরে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (UNO) নিজে উপস্থিত থেকে মোবাইল কোর্ট পরিচালনা করেন এবং সরকারি আদেশ অমান্য ও অতিরিক্ত ইজারা আদায়ের দায়ে অভিযুক্তকে ৪০,০০০ টাকা জরিমানা করেন। একইসঙ্গে তার ইজারা বাতিলের বিষয়ে জেলা প্রশাসক (DC) ও উপজেলা প্রশাসন যৌথভাবে প্রক্রিয়া শুরু করেছে। বর্তমানে ইজারা বাতিলের আনুষ্ঠানিকতা নিয়ে যাচাই-বাছাই চলছে। এই ঘটনার পর হাটের সাধারণ বিক্রেতা, খামারি ও স্থানীয় জনগণ প্রশাসনের এ ধরনের পদক্ষেপে সন্তোষ প্রকাশ করেছেন। দীর্ঘদিন ধরে তারা ভয় ও হয়রানির মধ্যে ইজারাদারদের মুখোমুখি হচ্ছিলেন, কিন্তু কেউ সাহস করে মুখ খুলতে পারছিলেন না। এই ঘটনাটি শুধু মাইজপাড়া নয়, বরং দেশের অন্যান্য হাটবাজারেও চলমান অনিয়ম ও অব্যবস্থাপনার বিরুদ্ধে একটি শক্ত বার্তা বহন করছে। স্থানীয় প্রশাসন ও সেনাবাহিনীর এই যৌথ পদক্ষেপ প্রমাণ করেছে যে, কেউ আইনের ঊর্ধ্বে নয় এবং জনগণের স্বার্থেই শৃঙ্খলা প্রতিষ্ঠা করা হবে।
Leave a Reply