মোঃ জাহেদুল ইসলাম রতন, লালমনিরহাট: লালমনিরহাট সদর হাসপাতালের জন্য আট তলা ভবন নির্মাণের কাজ চলতি বছরের এপ্রিলে শেষ হলেও অব্যবহৃত রয়ে গেছে তা জনবল সংকটের কারণে। হাসপাতালের সরকারীভাবে ১০০ শয্যা থেকে ২৫০ শয্যা হাসপাতাল হিসেবে উন্নীতকরণ করা হলেও সেবার মান এখনো সন্তোষজনক নয় বলে অভিযোগ ভুক্তভোগীদের। এটির কার্যক্ষম ক্ষমতা ১০০ শয্যার হাসপাতালের মধ্যে সীমাবদ্ধ রয়েছে। রোগীদের দুর্ভোগ কমাতে ২০১৭ সালে নভেম্বর মাসে প্রায় ৩৭ কোটি টাকা ব্যয়ে ২৫০ শয্যার হাসপাতাল ভবনটির নির্মাণ কাজ শুরু হয়। ২০১৯ সালে ভবনটির কাজ শেষ হওয়ার কথা থাকলেও কয়েকবার সময় বাড়ানোর পর হাসপাতালের আট তলা ভবন নির্মাণের কাজ চলতি বছরের এপ্রিলে শেষ হয়। এখন পর্যন্ত জনবল ও আধুনিক যন্ত্রপাতির সংকটের কারণে নতুন ভবনের উল্লেখযোগ্য কোন কার্যক্রমেই শুরু হয়নি। গতকাল সোমবার ঘুরে দেখা যায়, হাসপাতালের বিছানা স্বল্পতায় মেঝেতে ও বারান্দায় বিছানা করে শুয়ে আছেন অনেক মুমূর্ষু রোগী। এ হাসপাতালে পুরুষ রোগী পাশাপাশি নারী ও শিশু রোগীর সংখ্যা তুলনামূল অনেকটাই বেশি। রোগীদের অভিযোগ রোগ নির্ণয়ে আধুনিক যন্ত্রপাতি না থাকায় পরীক্ষা-নিরীক্ষার জন্য বাইরের ক্লিনিকে তাদেরকে যেতে হচ্ছে। এ অবস্থায় চিকিৎসা সেবার মান নিয়ে অভিযোগের কমতি নেই ভুক্তভোগীদের। আর্থিক স্বচ্ছলতা না থাকায় ব্যহত হচ্ছে চিকিৎসা সেবা। এছাড়াও সুইপার সংকটের কারণেও ছড়িয়ে ছিটিয়ে রয়েছে ময়লা আবজর্না। চিকিৎসকদের অবহেলা ও চিকিৎসক সংকটসহ নানান কারণে সুচিকিৎসা থেকে বঞ্চিত লালমনিরহাটের মানুষ। এখানে উন্নত স্বাস্থ্য সেবা দেয়ার সামান্য কিছু বৈজ্ঞানিক যন্ত্রপাতি ও ওষুধ থাকলেও সেসবের সুবিধা তেমন পাননা রোগীরা। জানাগেছে ২৫০ শয্যার অবকাঠামো তৈরি হলেও ১০০ শয্যার অবকাঠামো ও জনবল দিয়ে চালানো হচ্ছে হাসপাতালের নিয়মিত কার্যক্রম। এলাকার লোকজন এসব অনিয়মের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করলেও তেমন কোন লাভ হয়নি বলে জানান স্থানীয়রা। এ বিষয়ে লালমনিরহাটের কয়েকজন সাংবাদিক বলেন, বিগত সময় প্রিন্ট ও ইলেকট্রনিক মিডিয়ায় মেডিকেল সংক্রান্ত নানান অনিয়ম ও চিকিৎসা সেবা নিয়ে সংবাদ প্রচার করা হলেও তেমন কোনো পরিবর্তন হয়নি। সংবাদদাতা পরিদর্শনকালে, দেখেছেন যে পুরানো বিল্ডিংয়ে চিকিৎসা করা হচ্ছে রোগীদের, অনেকে বিছানার অভাবে বাধ্য হচ্ছেন মেঝেতে শুতে , প্রচণ্ড ঠান্ডায় চরম দুর্ভোগ সহ্য করছেন রোগীরা। ভর্তি রোগীর সংখ্যার তুলনায় ডাক্তার, নার্স এবং কর্মীদের ঘাটতিও স্পষ্ট ছিল। মাঝাপাড়াএলাকার শামসুরনাহার বেগম (৫৬) বলেন, "আমার ২০ বছরের ছেলে, ঠান্ডাজনিত জটিলতায় ভুগছে, বিছানার অভাবে ঠান্ডা মেঝেতে চিকিৎসা করা হচ্ছে, তার অবস্থা খারাপ হচ্ছে।"নতুন ভবনটি ব্যবহার করা হলে, এটি আরও রোগীদের থাকার ব্যবস্থা করতে পারত এবং এই ধরনের দুর্ভোগ প্রতিরোধ করতে পারত," তিনি যোগ করেছেন।লালমনিরহাট শহরেরবি ডি আর হাট এলাকার মানিক (৪৭) বলেন, পুরাতন ভবনের ওয়ার্ড গুলোতে নোংরা ও দুর্গন্ধযুক্ত, রোগীদের চিকিৎসার সময় দুর্গন্ধ সহ্য করতে হয়। তিনি হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের প্রতি আহ্বান জানান রোগীদের কল্যাণে নতুন ভবনে চিকিৎসা শুরু করার জন্য। হাসপাতাল সূত্রে জানা গেছে, হাসপাতালে ২৫০ রোগীর জন্য পর্যাপ্ত খাবার ও চিকিৎসা সামগ্রী থাকলেও জনবল না থাকায় একসঙ্গে ১০০ রোগীকে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে। হাসপাতালের বর্তমানে নতুন ভবনে শুধুমাত্র আউটডোর সার্ভিস চালু করা হয়েছে। বাকি সব সেবা পুরাতন ভবনেই দেওয়া হচ্ছে জনবল সংকটের কারণে।যোগাযোগ করা হলে, হাসপাতালের সুপারিনটেনডেন্ট ডাঃ আব্দুল মোকাদ্দেম বলেন, ২৫০ শয্যার হাসপাতাল হিসাবে সঠিকভাবে কাজ করার জন্য কমপক্ষে ৯০ জন ডাক্তার এবং ১৬০ জন নার্স প্রয়োজন। হাসপাতালে বর্তমানে মাত্র ১৯ জন ডাক্তার এবং ৬২ জন নার্স রয়েছে, এছাড়া আরও ২৪টি কর্মচারীর পদ শূন্য রয়েছে বলেও জানান তিনি। বর্তমানে আমরা পুরোনো ভবনে ১০০ শয্যায় রোগীদের চিকিৎসা দিতে হিমশিম খাচ্ছি। নতুন ভবনে সেবা দেওয়া শুরু করলে বর্তমানে রোগীর সংখ্যা বাড়বে, কিন্তু প্রাপ্য জনবল ঠিকমতো সেবা দিতে অপ্রতুল হবে। তিনি আরও বলেন, ডাক্তার, নার্স এবং স্টাফ "যদি আরও নিয়োগ করা হয়, তাহলে নতুন ভবনে চিকিৎসাসেবা আমরা ভালোভাবে পরিচালনা করতে পারব, যার ফলে রোগীরা উপকৃত হবে। এ বিষয়ে সংশ্লিষ্ট ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে একটি চিঠি পাঠানো হয়েছে।