মোঃ জাহেদুল ইসলাম রতন, লালমনিরহাট: লালমনিরহাট জেলায় বেশ কয়েক বছর ধরেই কৃষকেরা আমন ধান কাটার পর শীতকালীন ফসল হিসেবে আগাম আলুর চাষ করে আসছেন। এই আলু চাষের জন্য তারা স্বল্পমেয়াদী ও আগাম জাতের আমন ধানের চাষ করেন। এবার দফায় দফায় বন্যার কারনে আগাম জাতের ওই আমন ধান অনেকেরই নষ্ট হয়ে গেছে। প্রচলিত আমন ধানের আগেই এই ধান কেটে আলু বীজ রোপণ করেন। আলু চাষের জন্য সেসব জমিতে এই ধান চাষ করা সম্ভব হয়নি। অনেকেই ফেলে রাখা এসব জমিতে আগাম জাতের আলু বীজ রোপণ করেন। সেগুলো এখন তোলার সময় হয়েছে। অনেকেই আবার আলু তুলে ইতোমধ্যে বাজারে বিক্রিও শুরু করে দিয়েছেন। কিন্তু বাজারে নতুন আলুর দাম না থাকায় কৃষকদের মুখে দুশ্চিন্তার ছাপ নেমে এসেছে। জেলায় চলতি মৌসুমে আলুর ভালো ফলন হয়েছে। কিন্তু বাজার মূল্য কম হওয়ায় চাষিরা হতাশা প্রকাশ করেছেন। পাইকারি বাজারে ললিত আলুর পাশাপাশি দেশি জাতের আলুর দাম পাচ্ছেন না চাষিরা। আলুর দাম কম থাকায় খুচরা বাজারের ব্যবসায়ী ও ক্রেতারা স্বস্তি প্রকাশ করলেও চাষিরা বাধ্য হয়ে কম দামেই আলু বিক্রি করছেন। অন্যান্য বছর মৌসুমের শুরুতে বাজারে আগাম জাতের আলু ৫০ থেকে ৬০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হলেও এবছর শুরু থেকেই আলু ৩৫-৪০ টাকা দরে বিক্রি হয়। পর্যায়ক্রমে তা এখন ১৫-২০ টাকায় নেমে এসেছে। আর এ কারনে ভরা মৌসুমে আলুর দাম নিয়ে শঙ্কিত হয়ে পড়েছেন। অনেকেই বলছেন লাভ তো দুরের কথা উৎপাদন খরচ উঠানোই মুশকিল হচ্ছে । লালমনিরহাট সদর, আদিতমারী, কালীগঞ্জ, হাতীবান্ধা ও পাটগ্রাম উপজেলার প্রায় প্রতিটি গ্রামে এবার আলু চাষ করেছে, এখন আলু তোলা নিয়ে ব্যস্ত। অথচ আলু ১২ থেকে ১৪ টাকা কেজি দরে জমি থেকেই বিক্রি করেছেন কৃষকরা। দফায় দফায় বিদ্যুতের দাম বাড়ছে, কীটনাশক সারের সিন্ডিকেটের শেষ নেই। বিশেষ করে রোপণের সময় দ্বিগুণ দামে কিনতে হয়েছে পটাশ সার। এতে করে যে কোন বছরের তুলনায় বিঘায় ১৫-১৮ হাজার টাকা অতিরিক্ত খরচ হয়েছে, সেচের খরচও বাড়তি। অথচ আলু ১১ টাকা ৫০ পয়সা, ১২ টাকা কেজিতে বিক্রি করতে হচ্ছে। নেই বহিরাগত আলু কেনা ব্যবসায়ীরা। ফলে চরম হতাশায় ভুগছেন আলু চাষিরা, দাম কম থাকায় কপালে জমেছে চিন্তার ভাজ।উপজেলার বড়বাড়ি ইউনিয়নের কৃষক হেলাল হোসেন জানান, বাজারে আলুর দামের পরিস্থিতি খুবই খারাপ। যে টাকা দিয়ে আলু উত্তোলন করা হচ্ছে সেই দামও বাজারে মিলছে না। এবার আলু চাষ করে সংকটে পড়েছি। জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, লালমনিরহাটে এই মৌসুমে ৬ হাজার ৫০০ হেক্টর জমিতে আলু চাষ হয়েছে। জেলার চাহিদার চেয়েও বেশি আলু উৎপাদন হওয়ায় লক্ষ্যমাত্রা অর্জিত হয়েছে। কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, আলুর বাজারদর স্থিতিশীল থাকলে এবং বিদেশে রপ্তানির সুযোগ পাওয়া গেলে তাহলে চাষিরা লাভবান হবেন। লালমনিরহাট কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক ড. মো. সাইখুল আরিফিন জানান, আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় আলুর ফলন ভালো হয়েছে। তবে শেষ সময়ে বাজারে আলুর মূল্য কম থাকায় কৃষকরা আলু নিয়ে হতাশা প্রকাশ করেছেন।