মোঃ জাহেদুল ইসলাম রতন লালমনিরহাট: লালমনিরহাট চরাঞ্চলসহ বিভিন্ন স্থানে লাভজনক ভুট্টা চাষাবাদে ঝুঁকে পড়েছে কৃষকেরা। বিশেষ করে মৌসুমী রোপা আমন ধান কাটার পর সেই জমিতে এ চাষাবাদ শুরু করেছে কৃষকরা। অল্প পরিশ্রমে বেশি লাভের আশায় এবছরও ভুট্টা চাষে স্বপ্ন বুনছেন জেলার ভুট্টা চাষিরা। আবহাওয়া অনুকূলে এবছরও ভুট্টার বাম্পার ফলন হবে বলে আশা করছেন তারা। সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, এবার জেলার ৫টি উপজেলায় ৩৩ হাজার ৫৫ হেক্টর জমিতে ভুট্টা চাষের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। চরাঞ্চলসহ জেলার বিভিন্ন স্থানে কৃষকেরা এ চাষাবাদ শুরু করেছে। খরচ কম ও লাভ বেশি হওয়ায় এ চাষাবাদে ঝুঁকে পড়েছে কৃষকেরা। সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, জেলার ৫ উপজেলাসহ তিস্তার চরাঞ্চলের বিস্তীর্ণ এলাকাজুড়ে ভুট্টার আবাদ হয়েছে। কম খরচে বেশি উৎপাদন হওয়ায় চরাঞ্চলের বেশিরভাগ জায়গায় দিন দিন ভুট্টার আবাদ বেড়ে চলেছে। পরিত্যাক্ত জমিগুলোও এখন আবাদী হয়ে উঠেছে। একসময় জেলার চর অঞ্চলের জমিগুলোতে তেমন কোনো ফসল ফলতো না। শত শত একর জমি অনাবাদি পড়ে থাকতো। এসব জমিজুড়ে জন্ম নিতো আগাছা। এখন সেসব জমিতে ভুট্টা চাষ হচ্ছে। বিশেষ করে ভুট্টা চাষে পরিশ্রম ও খরচ কম হওয়ায় কৃষকেরা এ চাষাবাদে ঝুকে পড়েছে। অনেক স্থানে জমিতে রশি টানিয়ে সারিবদ্ধ ভাবে উন্নতজাতের এই ভুট্টা বীজ লাগানো হয়েছে ও হচ্ছে। ধানের চেয়ে ভুট্টার ফলন ভাল এবং ধানের মূল্যের চেয়ে ভুট্টার বাজারও ভালো। ফলন ভালো হলে প্রতি বিঘা জমি থেকে ৩৯/৪০ মন ভুট্টা উৎপাদন হয়ে থাকে। আবহাওয়া অনুকূলে থাকলে সঠিক পরিচর্যায় মাত্র ৪ মাসেই জমি থেকে এ ভুট্টা উত্তলন করা যাবে। তিস্তা চরের কৃষক আমিনুল ইসলাম (৫০) তিনি বলেন, এবছর দের একর জমিতে ভুট্টা চাষ করেছি অন্যান্য ফসলের চেয়ে ভুট্টা চাষে খরচ তুলনামূলক কম। এছাড়া ভুট্টা গাছের কোনকিছুই ফেলানো যায় না। এর পাতা গরুকে খাওয়ানো যায় এবং ডাটা ও মোচা লাকড়ি হিসেবে ব্যবহার করা যায়। বাজারে চাহিদা ও দামও ভালো । তাই এ বছর দের একর জমিতে ভুট্টা আবাদ করেছি। যদি আশানুরূপ ফলন ও দাম পাই তাহলে আগামী বছর আরো বেশি জমিতে ভুট্টার চাষ করবো। কুলাঘাট ইউনিয়নের কৃষক জাহিদ হোসেন (৪২) জানান, তিনি এবার এক একর জমিতে ভুট্টা চাষ করেছেন। তার বিঘা প্রতি (৩৩ শতাংশ) জমিতে ভুট্টা উৎপাদন করতে মোট খরচ হবে প্রায় ১৫ থেকে ১৮ হাজার টাকা। আবার সেই জমিতে ভুট্টার ফলন ভালো হলে তিনি প্রতি বিঘায় ৩৯থেকে ৪২মন ভুট্টা পাবেন। বর্তমানে বাজারে প্রতি মণ ভুট্টা প্রায় সাড়ে ১১’শ টাকা থেকে ১২’শ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। তিনি বলেন, ১ বিঘা জমিতে ভুট্টা উৎপাদন করে প্রায় ২০ থেকে ২২ হাজার টাকা পর্যন্ত লাভ করা যায়। ভুট্টাচাষে সেচের চাহিদা কম হওয়ায় কৃষকদের কাছে এই ফসল চাষ জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে উল্লেখ করে মোগলহাট ইউনিয়নের কৃষক রাশেদুল (৪৪) বলেন, ভুট্টা চাষ লাভজনক হওয়ায় প্রতিবারের মতো এবারও দেড় থেকে দুই বিঘা জমিতে ভুট্টার চাষ করেছি। এ বিষয়ে জেলা কৃষি সম্প্রসারণ বিভাগের উপ-পরিচালক ড. মোঃ সাইখুল আরিফিন জানান, এবছর জেলার ৩৩ হাজার ৫৫ হেক্টর জমিতে ভুট্টার চাষ করা হয়েছে। চরাঞ্চলসহ জেলার বিভিন্ন স্থানে এবার স্বল্প খরচে এ ভুট্টা চাষাবাদ শুরু হয়েছে। এ চাষাবাদে উৎসাহিত করার জন্য বিশেষ করে বীজ, সার ও তেলের জন্য সার্বক্ষণিক মনিটরিং করছি।