মোঃ জাহেদুল ইসলাম রতন, লালমনিরহাট: মাঘের জাড়ে মহিষের শিং নড়ে’, হামরা (আমরা) জারত (ঠান্ডা) মরি গেইনো ব্যাহে (বাবা), হামারগুলোর (আমাদের) খবর কায়ো নেয় না, হামাক (আমাক) একনা (একটা) কম্বল দিয়া ঠান্ডা থাকি বাঁচান ব্যাহে, দিন/রাত ঘন কুয়াশা, কনকনে ঠান্ডা বাতাস, দিনের বেলায় সূর্যের দেখা মিলে না। এভাবেই কথাগুলো বলেছেন, লালমিনরহাট সদর উপজেলার খুনিয়াগাছ ইউনিয়নের তিস্তা নদীর কোলঘেঁষা হরিণচড়া গ্রামের দিনমজুর আঃ হাকিম মিয়া (৬০)। জানা গেছে, মাঘের আগমন মানে সামনে ফাল্গুনের আগমনী বার্তা। শীত বিদায়ের পালা। ঋতু বদলে মাঘের মাঝে এই ঠাণ্ডায় সবার কাহিল অবস্থা। পৌষ মাসের চেয়ে মাঘ মাসে এলাকায় শীতের দাপট বেশি হয়। তার উপর হিমালয়ের পাদদেশে অবস্থিত জেলা লালমনিরহাট। দুদিক মিলে মাঘের সন্ধ্যা নামার আগেই ঘন কুয়াশায় আচ্ছন্ন হয়ে যায় গোটা জেলা। কোন কোন দিন সারাদিনে কুয়াশার চাদরে ঢাকা থাকে। রাতে শীতল বাতাসে মানুষের শরীর বরফ হয়ে যাওয়ার মতো অবস্থার সৃষ্টি হয়। তিস্তা ৬৩ চরাঞ্চলসহ বিভিন্ন এলাকার দরিদ্র ও ছিন্নমূল মানুষেরা তীব্র শীতে কাহিল হয়ে পড়েছে। বিশেষ করে শিশু, বৃদ্ধ, খেটে খাওয়া ছিন্নমূল ও দরিদ্র মানুষ গরম কাপড়ের অভাবে শীত ও ঠাণ্ডায় জবুথবু হয়ে পড়েছে। দিনের বেলায়ও লালমনিরহাট-বুড়িমারী মহাসড়কে হেডলাইট জ্বালিয়ে যান চলাচল করতে দেখা গেছে। তীব্র শীত ও কনকনে ঠাণ্ডায় শ্বাসকষ্ট, নিউমোনিয়া, হাঁপানি, ডায়রিয়াসহ নানা রোগের প্রকোপ বৃদ্ধি পেয়েছে। তীব্র ঠাণ্ডায় হাঁস, মুরগির মড়ক দেখা দিয়েছে। এছাড়াও গবাদিপশু গরু, ছাগল, মহিষের গায়ে চটের বস্তা ঝুলিয়ে দিয়ে শীত নিবারণের চেষ্টা চালাচ্ছে কৃষকরা। তীব্র শীতে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে আবাদি ফসল। সরকারি বা বেসরকারিভাবে দেওয়া হয়নি পর্যাপ্ত শীতবস্ত্র। লালমিনরহাট সদর উপজেলার হারাটি এলাকার মিলন মিয়া বলেন, মাঘের জাড়ে মহিষের শিং নড়ে’- এই প্রবাদ বাক্যটি এখন হাড়ে হাড়ে আমরা টের পাচ্ছি। ঠাণ্ডায় সবার একেবারে ত্রাহি ত্রাহি অবস্থা সৃষ্টি হয়েছে। অপরদিকে অতিরিক্ত শীতের তীব্রতায় আবাদি ফসল যেমন ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে, ঠিক তেমনি মানুষও ভুগছে নানা শারীরিক সমস্যায়। লালমিনরহাট সদর উপজেলার মহেন্দ্রনগর এলাকার স্কুল শিক্ষক আতিকুর রহমান বলেন, মাঘের আগমন মানেই ফাল্গুনের আগমনী বার্তা। পৌষ মাসের চেয়ে মাঘ মাসে শীত ও ঠান্ডার দাপট বেশি হয়। ফাল্গুন মাস পরার সাথে সাথে ঠান্ডা কমতে শুরু করবে। তাই মাঘ জুড়ে কনকনে শীত বরফের মতো বাতাস দিন রাতে বইছে। ফলে এলাকার খেটে খাওয়া ছিন্নমূল ও দরিদ্র মানুষগুলো জবুথবু হয়ে পড়েছে। লালমনিরহাট জেলা প্রশাসক এইচএম রকিব হায়দার বলেন, ইতিমধ্যে জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে কয়েক হাজার কম্বল বিতরণ করা হয়েছে। এছাড়াও উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে চরাঞ্চল সহ ছিন্নমূল মানুষের মাঝে শীতবস্ত্র বিতরণ অব্যাহত রয়েছে।