1. admin@pressbd.online : admin :
মঙ্গলবার, ০৪ ফেব্রুয়ারী ২০২৫, ০৪:৪১ পূর্বাহ্ন
শিরোনাম :
দক্ষিণ জেলা আহবায়ক কমিটিকে  স্বাগত জানিয়ে পটিয়ায় বিএনপি’র  বর্ণাঢ্য আনন্দ মিছিল সমাবেশ নরসিংদী’র শিবপুর সরকারি শহীদ আসাদ কলেজে শ্রী শ্রী সরস্বতী পূজা- ২০২৫ অনুষ্ঠিত  রূপগঞ্জে মেশিনারিজ দোকানে আগুন ! ১৫ লাখ টাকার ক্ষয়ক্ষতি শার্শায় উৎসবমুখর পরিবেশে বিএনপির দ্বি-বার্ষিক সম্মেলন অনুষ্ঠিত হার্ডিঞ্জ ব্রিজের নিচে পদ্মা নদী শুকিয়ে হারিয়েছে তার জৌলুস  পটিয়া বাথুয়া স্কুলের প্রধান  শিক্ষক শাহজাহান’কে হত্যার  হুমকি তিব্র নিন্দা প্রতিবাদ  বাবাকে হারিয়ে ৬ বছর ধরে নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছে আলী হায়দার পরিবার নগরীর দৌলতপুর বাজার বণিক সমিতির ত্রি-বার্ষিক সাধারণ নির্বাচন স্থগিত উপজেলা নির্বাহী অফিসারের সাথে সাংবাদিকসহ বিভিন্ন পেশার মানুষের মতবিনিময় সভা  মাঘের জাড়ে মহিষের শিং নড়ে’

বান্দরবানে আলীর সুড়ঙ্গ রহস্যর হাতছানি দিচ্ছে ভ্রমণ পিপাসুদের

  • প্রকাশিত : শুক্রবার, ৬ ডিসেম্বর, ২০২৪
  • ৩২ বার পাঠ করা হয়েছে

মো. ইসমাইলুল করিম স্টাফ রিপোর্টার: পার্বত্য জেলার বান্দরবানের আলীকদমে গুহা আলীর সুড়ঙ্গ নিয়ে রহস্যের শেষ নেই। আলীকদম নাম নিয়ে যেমন নানা কথা, উপকথা আর অভিমত চালু আছে,তেমনি রহস্যময় এই গুহা নিয়েও মজার মজার সব গল্প আর কিংবদন্তি পাওয়া যায়।এলাকাবাসীর কাছে এই রহস্যময় গুহার নাম আলীর সুরম (আলীর গুহা)নামে পরিচিত। সরকারি নথিপত্রে এটাকে চিহ্নিত করা হয়েছে পুরাকীর্তি হিসেবে। শুধু যে সুড়ঙ্গটার নাম আলীর নামে তা কিন্তু নয়,যে পাথুরে পাহাড়ে এই গুহার অবস্থান তার নামও আলীর পাহাড় আর উপজেলার নাম আলীকদম। এই আলীকদম আলীর পাহাড় আর আলীর গুহা একসূত্রে গাঁথা বলে ধারণা করা যায়। তবে কখন কিভাবে দুর্গম পাহাড়ে এমন অদ্ভূত সুন্দর গুহা তৈরি হলো তা নিয়ে নির্ভরযোগ্য কোনো তথ্য বা নথি পাওয়া যায় না। আলীর সুড়ঙ্গ গুহা নিয়ে রহস্যের শেষ নেই। আলীকদম সদর থেকে ২ দুই কিলোমিটার দূরে মাতামুহুরী-তৈন খাল পাড় ঘেঁষে দুই পাহাড়ের চূড়ায় এই গুহার সৃষ্টি। এলাকাবাসীর কাছে এই গুহা আলীর সুরম নামে পরিচিত।সরকার এই গুহাকে পুরাকীর্তি হিসেবে চিহ্নিত করেছে। এখানে মূলত তিনটি গুহা রয়েছে।সবগুলো গুহা যদি ঘুরে দেখতে চান তাহলে আপনার ৬/৮ ঘণ্টা সময় লেগে যাবে। গুহা ঘুরতে আপনাকে ঝিরিপথ দিয়ে চলতে হবে।ঝিরি থেকে গুহার মুখ ওপরে অবস্থিত।প্রথম গুহা ঘুরতে আপনার বেশি সমস্যা হবে না কারণ প্রথম গুহায় সিঁড়ির ব্যবস্থা রয়েছে।কিন্তু বাকি গুহা গুলোতে পাহাড় বেয়ে আপনাকে উঠতে হবে। গুহার কিছু অংশে হামাগুড়ি দিয়ে যেতে হবে কারণ এর কিছু অংশ বেশ সরু। গুহার ভেতরে গেলেই যেন এক অজানা রহস্য আপনাকে ঘিরে রাখবে।নতুন এক জগতের সঙ্গে পরিচয় হবে আপনার। ভেতরে যেতে অবশ্যই টর্চ কিংবা মশাল নিতে হবে।একেবারেই ঘুটঘুটে অন্ধকারছন্ন এই গুহার ভেতরের অংশ। গা ছমছম করা পরিবেশ এবং একে বারেই স্যাঁতসেঁতে এই গুহাগুলো। বহুল প্রচলিত ধারণা হলো আলোহক্যডং থেকে আলীকদম নামটির জন্ম। যার অর্থ পাহাড় আর নদীর মধ্যবর্তী স্থান। বান্দরবানের রাজা বোমাং সার্কেল চিফ এর নথিপত্রে ও পাকিস্তান আমলের মানচিত্রে আলোহক্যডং নামের অস্তিত্ব পাওয়া যায়। পার্বত্য অঞ্চলের সবচেয়ে পুরনো মানচিত্রেও (Ensea Det Bengalla) পর্তুগীজ পণ্ডিত জোয়াও জে বারোজ (Jao De Barros) আলোহক্যডং নামটি ব্যবহার করেছেন। আরকানি ভাষায় অনেক পাহাড় ও জায়গার নামে ডং, থং বা দং উপসর্গ জুড়ে আছে। সম্ভবত: ডং মানেই পাহাড়। তাই ধারণা করা হয়, তাজিংডং ও কেউক্রাডং পাহাড়ের মতোই আলোহক্যডং একটি পাহাড়ের নাম, যা কালক্রমে আলীকদম নাম নিয়েছে। অবিভক্ত পার্বত্য চট্টগ্রাম তথা রাঙামাটির প্রথম জেলা প্রশাসক ক্যাপ্টেন টিএইচ লুইন এর মতে, ALLEY KINGDOM থেকে ALIKADAM নাম হয়েছে। তার মতে, ALLEY অর্থ দমন, আর KINGDOM অর্থ রাজ্য। বাংলায় মুঘল সুবেদার শায়েস্তা খাঁ এখানে ক্ষুদ্র এক রাজ্য শক্তিকে করায়ত্ব বা দমন করেন। তাই ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পাননি আমলে এ অঞ্চলের নাম হয় ALLEY KINGDOM বা দমন করা রাজ্য। যা পরবর্তীতে আলীকদম নামে টিকে থাকে।নবম শতাব্দী থেকে আরাকানি শাসনে থাকা আলীকদম পঞ্চদশ ও ষোড়শ শতকে বাংলার সুলতান জালালউদ্দিনের করায়ত্ব হয়। ১৭৫৬ সালে মুঘলরা এ অঞ্চল জয় করলে আরাকানি শাসনের কফিন শেষ পেরেক ঠোকার কাজটি হয়ে যায়। আরাকান রাজ কং হ্লা প্রুকে আত্মসমর্পণ করতে বাধ্য করে স্ব-পরিবারে। পার্বত্য অঞ্চল থেকে বিতাড়িত করা হয়েছে অনেক আগে। আরকানি ইতিহাসে বলা হচ্ছে, শাসন পরিচালনার ফায়দা তুলছে ১৮ জন আরকানি রাজা মুসলিম উপাধি গ্রহণ করে ছিলেন। এদের মধ্যে ১৪৩৪-১৪৫৯ খ্রিস্টাব্দ পর্যন্ত এ অঞ্চল শাসন করেন রাজা মাং খারি। তার মুসলিম উপধি ছিল আলী খান। ১৫৩১ খ্রিস্টাব্দ পর্যন্ত রাজত্ব পরিচালনাকারী রাজা থাজাথা’র মুসলিম উপাধি ছিল আলী শাহ্। এ দুই নামের প্রভাবে আলীকদম নামটি এসে থাকতে পারে। অপর এক ব্যাখ্যায় বলা হচ্ছে, আরবীতে কদম অর্থ পা। প্রয়োগ ভেদে যার অর্থ পদাচারণাও হতে পারে। আলী নামের কেউ একজন কোনো এক সময় এ অঞ্চলে পা রেখে নিরঙ্কুশ আধিপত্য বিস্তার করতে সক্ষম হয়েছিলেন। পরে তার নামের সঙ্গে কদম শব্দটি যুক্ত হয়ে আলীকদম নামটির জন্ম। তবে এমনও ধারণা প্রচলিত যে, হযরত শাহজালাল এর নেতৃত্বে ৩৬০ আউলিয়া ধর্মপ্রচারের জন্য সিলেট অঞ্চলে এলে তাদের একটি অংশ পার্বত্য এলাকায় আসেন, যাদের কারো নামের আলী উপাধি থেকে আলীকদম নামের জন্ম। আলীকদমের অবস্থান বান্দরবান থেকে ১১৮ কিলোমিটার দক্ষিণে। পাহাড়ের পর পাহাড়ী রাস্তা পাড়ি দিয়ে আলী সুড়ঙ্গে যেতে হয়। থানচি থেকে আলীকদমে সম্প্রতি ডিম পাহাড়ের ওপর দিয়ে নির্মিত দেশের সবচেয়ে উঁচু রাস্তা দিয়ে এখানে যাওয়া যায়। এ রাস্তার মাথায় পানবাজার এলাকা থেকে পূর্ব দিকে মাতামুহুরি নদীর তীরে আলীর পাহাড়ের অবস্থান। আলীকদম শহর থেকে যার দূরত্ব ২ দুই কিলোমিটার মাত্র। বর্তমানে যাতায়াতের সুবিধার্তে তৈন খালের উপর দিয়ে একটি ব্রিজ ও রাস্তা সিঁডি নির্মাণ করা হয়েছে। গাইড : আলী গুহা বা আলীর সুড়ঙ্গে আগে গিয়ে না থাকলে একা না যাওয়াই ভালো। সঙ্গে গাইড নিয়ে নেবেন। আলীকদম থেকে কাউকে নিয়ে নিতে পারেন গাইড হিসেবে। তাছাড়া ঝিরিপথের শুরুতেই বেশ কিছু ছেলে দাঁড়িয়ে থাকে, তাদের মধ্য থেকেও কাউকে নিতে পারেন। তবে আগে থেকেই কথা বলে নেবেন সবগুলো গুহা যেন ঘুরে দেখায়। থাকার ব্যবস্থা : আলী গুহায় একদিনে গিয়েই ঘুরে আসতে পারবেন। রাতে ঢাকা থেকে বাস করে গিয়ে সারাদিন ঘুরে আবার রাতের বাসে ঢাকায় ফিরে আসতে পারেন। চট্টগ্রাম থেকে খুব সকালে গেলে ঘুরে আবার একদিনেই ফিরে আসতে পারবেন। তারপরও যদি থাকার প্রয়োজন হয় তাহলে আলীকদমে উপজেলা রোডে দ্য দামতুয়া ইন আবাসিক অথবা জেলা পরিষদের ডাক বাংলো অথবা অর্কিড হোটেল এন্ড রেডেনশিয়ালে থাকতে পারেন। খাওয়ার ব্যবস্থা : আলীকদমে বেশকিছু খাবারের হোটেল আছে। এ ছাড়া পানবাজারেও বেশকিছু হোটেল রয়েছে। খুব ভালো মানের খাবার না থাকলেও মোটামুটি মানের খাবার পাবেন এসব হোটেলে।কীভাবে যাবেন : আলী গুহায় যেতে প্রথমেই আপনাকে বান্দরবান যেতে হবে। বান্দরবান জেলার আলীকদম পৌঁছে তারপর আলী গুহায় যেতে হবে। বান্দরবান শহর থেকে থানচি-আলীকদম রোড দিয়ে কিংবা কক্সবাজারের চকরিয়া উপজেলা হয়ে আলীকদম আসতে হবে।ঢাকা থেকে কীভাবে যাবেন আলীকদম :ঢাকা থেকে সরাসরি আলীকদম যেতে পারবেন। ঢাকায় শ্যামলী ও হানিফ বাস সরাসরি আলীকদম যায়। ঢাকা থেকে সরাসরি যাওয়াই ভালো। এতে সময় অনেক কমে যায়। এ ক্ষেত্রে ভাড়া হবে ৮৫০/১০০০ টাকা। এ ছাড়া কক্সবাজারগামী যেকোনো বাসে চকরিয়া গিয়ে যেতে পারেন আলীকদম। ঢাকা থেকে চকরিয়া বাস ভাড়া নেবে ৮৫০ থেকে ১ হাজার ৪০০ টাকা। চকরিয়ায় আলীকদম যাওয়ার লোকাল বাস রয়েছে। এসব বাস প্রতিদিন সকাল ৭টা থেকে সন্ধ্যা ৬টা ৩০ মিনিট পর্যন্ত আলীকদমের উদ্দেশে ছেড়ে যায়। তা ছাড়া লোকাল জিপ অথবা চাঁদের গাড়িতে করে চকরিয়া থেকে আলীকদম যেতে পারবেন। এ ক্ষেত্রে লোকাল ভাড়া নেবে ৬০-৬৫ টাকা। রিজার্ভ নিলে ১ হাজার ২০০ থেকে ১ হাজার ৫০০ টাকা নেবে ভাড়া।আলীকদম থেকে আলীর গুহা কীভাবে যাবেন : প্রথমে আলীকদম থেকে তিন কিলোমিটার দূরে মংচপ্রুপাড়ায় যেতে হবে। হেঁটে কিংবা ইজিবাইকে করে যেতে পারেন। মংচপ্রুপাড়ার পাশ দিয়েই রয়েছে টোয়াইন খাল। এই খাল পার হয়ে কিছুক্ষণ পাহাড় ও ঝিরিপথে হেঁটে আলীর সুড়ঙ্গে যেতে হবে। সময় লাগবে ২৫-৩০ মিনিট। সবগুলো গুহা দেখা ও আসা-যাওয়ায় মোট সময় লাগবে তিন ঘণ্টার মতো। যারা পাহাড়-নদী,ঝরনা আর অরণ্য পাছন্দ করেন তাদের জন্য আলীকদম অনন্য আকর্ষনীয় স্থান জানায়।

সংবাদটি শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরো সংবাদ পড়ুন
February 2025
M T W T F S S
 123
45678910
11121314151617
18192021222324
25262728293031
© All rights reserved © 2024
কারিগরি সহযোগিতায়: জাগো হোষ্টার বিডি