সোহেল খান দূর্জয় নেত্রকোনা: পাল্টে গেছে নেত্রকোনা জেলা কারাগারের দৃশ্যপট। কারাগার এখন আর দুঃখ, কষ্ট বা সাজা ভোগ করার জায়গা নয়। প্রয়োজনীয় উদ্যোগ আর দক্ষ ব্যবস্থাপনায় এটি হয়ে উঠেছে ক্রমশঃ সংশোধনাগার হিসেবে। বর্তমানে নেত্রকোনা জেলা কারাগারে হাজতি, কয়েদী ও দর্শনার্থীদের আগের মতো দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে না। কারা কর্তৃপক্ষ সূত্রে জানা যায়, ব্রিটিশ আমলে আরামবাগ এলাকায় পুরাতন হাসপাতাল সংলগ্ন মগড়া নদীর তীরে দেড় একর জায়গার উপর নেত্রকোনা উপ-কারাগার প্রতিষ্ঠা করা হয়। তখন উপ-কারাগারের বন্ধী ধারণ ক্ষমতা ছিল মাত্র ২৬৫ জন। ২৬৫ জন বন্ধী ধারণ ক্ষমতার কারাগারে বেশীর ভাগ সময়েই ৪ শত থেকে ৫ শত জন বন্ধীকে গাদাগাদি করে রাখা হতো। বন্ধীদের মানবিক দিক বিবেচনা করে সরকার ১২ জেলায় নতুন কারাগার নির্মাণের উদ্যোগ গ্রহন করে। এরই অংশ হিসাবে জেলা শহরের কাইলাটী রোড এলাকায় ১০ একর জায়গায় উপর নতুন কারাগার নির্মাণ করা হয়। কারাগারে সরেজমিনে গিয়ে জানা যায় ২০১৬ সালের ২০ জানুয়ারী সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে নির্মিত ১২টি জেলা কারাগার একযোগে উদ্বোধন করেন। নতুন কারাগারে ৫টি বন্দী ভবন, ১টি কারা হাসপাতাল, ১টি কিশোর ওয়ার্ড, ১টি লাইব্রেরী, ১টি ধোপী খানা, ২টি সেল, ১টি ক্যান্টিন ও জেল সুপার, জেলার ও ডেপুটি জেলারের জন্য আবাসিক ভবন ও কারারক্ষীদের জন্য ব্যারাক নির্মাণ করা হয়। নতুন কারাগারের বন্দী ধারণ ক্ষমতা ৪ শত জন। এর মধ্যে পুরুষ ৩৫০ এবং মহিলা ৫০ জন। ডাঃ মোস্তাফিজুর রহমান জানান, হাজতি ও কয়েদিদের প্রয়োজনীয় চিকিৎসা সেবা দেয়ার জন্য ২৫ শয্যা বিশিষ্ট কারা হাসপাতাল রয়েছে, সেখানে ১জন চিকিৎসক সার্বক্ষনিক নিয়োজিত রয়েছে। জেলার(ভারপ্রাপ্ত ) মোহাম্মদ আবু সাদ্দাত বলেন, পুরাতন কারাগারে বন্ধীদের সাথে দেখা করতে আসা আত্মীয় স্বজন বা দর্শনার্থীদের কাছ থেকে অর্থ আদায় করার অভিযোগ শুনা গেলেও বর্তমানে ৫টাকার টিকিটের ব্যবস্থা করায় এখন আর এই অভিযোগ শুনা যায় না। আগে বন্ধী ওয়ার্ডে কোন প্রকার ফ্যান দেয়া হতো না। ফলে গরম কালে তাদেরকে গরমে গলদগর্ম হতে হতো। এখন প্রতিটি ভবনে পর্যাপ্ত সংখ্যক ফ্যান দেয়া হয়েছে। আগে হাজতি ও কয়েদিদের চিত্ত বিনোদনের কোনো রকম সুযোগ সুবিধা ছিল না। এখন প্রতিটি ওয়ার্ডে রেডিও শুনার ও টেলিভিশন দেখার ব্যবস্থা করা হয়েছে। খেলাধুলার জন্য রয়েছে ফুটবল, ভলিবল, কেরাম, দাবা, কাবাডি ও লুডু খেলার ব্যবস্থা। এছাড়াও বন্ধীদের শরীর ঠিক রাখার জন্য ব্যায়াম ও শরীর চর্চার ব্যবস্থা রয়েছে। কারাগারের পরিবেশকে সুন্দর করার জন্য চারপাশে বিভিন্ন ধরনের ফুলের বাগান, বন্ধীরা বসে আনন্দে সময় কাটানোর জন্য পাঁকা পাঠাতনের বেঞ্চের ব্যবস্থা করা হয়েছে। এছাড়াও পুকুরের সৌন্দর্য বৃদ্ধির জন্য মাঝখানে কৃত্রিম বকের প্রতিকৃতি স্থাপন ও রাতে লাইটিংয়ের ব্যবস্থা করা হয়েছে। গান বাজনা করার জন্য ঢোল-তবলা, হারমোনিয়াম, বাশী ও বেহালার ব্যবস্থা রাখা হয়েছে। হাজতি বা কয়েদিরা যাতে জেল থেকে বের হয়ে স্বাভাবিক জীবনে ফিরে যেতে পারে তার জন্য নিরক্ষরতা দূরীকরণ, ধর্মীয় শিক্ষার পাশাপাশি প্রতিটি ওয়ার্ডে নিজ নিজ ধর্ম পালনের ব্যবস্থা রাখা হয়েছে। এছাড়াও তাদেরকে হস্ত শিল্প প্রশিক্ষন ও মহিলাদের জন্য সেলাই প্রশিক্ষনের ব্যবস্থা করা হয়েছে। সরেজমিনে গিয়ে জেল সুপার(ভারপ্রাপ্ত) দিদারুল আলমের সাথে কথা বললে তিনি জানান, কারাগারের অবকাঠামো বেড়েছে, কিন্তু সেই পর্যায়ে লোকবল বাড়েনি। ২৬৫ জন বন্ধীর জন্য যে জনবল ছিল, বর্তমানে ৪শ জন বন্ধীর জন্য সেই লোকবলেই রয়েছে, বর্তমানে এই কারাগারে প্রায় ৭শত বন্দী রয়েছে,। কারাগারের নিরাপত্তা ও বন্ধীদের সুযোগ সুবিধা বৃদ্ধি করতে হলে লোকবল বাড়ানো প্রয়োজন। লোকবল বাড়ানো হলে কারাগারে বন্ধীদের প্রয়োজনীয় সেবা ও আর্ত-কর্ম সংস্থানের সুযোগ আরো বৃদ্ধি করা সম্ভব হবে। সরেজমিনে গিয়ে আরো দেখা গেছে, বন্দীদের খাবারের ব্যবস্থা আগের তুলনায় অনেক ভালো।রাখিবো নিরাপদ দেখাবো আলোর পথ এই বাক্যটির সাথে রয়েছে বর্তমান পরিস্থিতির মিল।
Leave a Reply