ওয়াহিদ মুরাদ, খুলনা ব্যুরো চীফ–কৃষিই সমৃদ্ধি এই প্রতিপাদ্যকে সামনে রেখে খুলনার দিঘলিয়া উপজেলার ব্রহ্মগাতি গ্রামে ২০২৪-২৫ অর্থবছরে কৃষি পুনর্বাসন সহায়তা খাতের আওতায় রবি মৌসুমে বোরো ধানের উফশি জাত সমলয়ে চাষাবাদের (synchronised cultivation) ব্লক প্রদর্শনীর চারা রাইস ট্রান্সপ্লান্টারের মাধ্যমে রোপন অনুষ্ঠানের আজ ১৪ জানুয়ারি মঙ্গলবার শুভ উদ্বোধন ও আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে। কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর দিঘলিয়ার আয়োজনে উক্ত সভায় প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থেকে বক্তব্য প্রদান করেন কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর খুলনা অঞ্চল খুলনা এর অতিরিক্ত পরিচালক মোঃ রফিকুল ইসলাম। কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর খামারবাড়ি খুলনার উপ-পরিচালক কাজী জাহাঙ্গীর হোসেনের সভাপতিত্বে উক্ত অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন দিঘলিয়া উপজেলা নির্বাহী অফিসার আরিফুল ইসলাম। উপজেলা কৃষি অফিসার কিশোর আহমেদের স্বাগত বক্তব্যের মাধ্যমে অনুষ্ঠানের কার্যক্রম শুরু হয়। প্রধান অতিথি এবং অন্যান্য অতিথিবৃন্দ সমলয়ে কৃষি আবাদের উপরে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ এবং তাৎপর্যপূর্ণ বক্তব্য পেশ করেন। তারা বলেন, ইতিমধ্যে সমলয়ে কৃষি আবাদের উপরে অত্র এলাকার কৃষকদের প্রশিক্ষণ প্রদান করে প্রশিক্ষিত করা হয়েছ। আশা করা যায় তারা এ ব্যাপারে পারদর্শী হয়ে সমলয়ে কৃষি আবাদ করে লাভবান হবেন। এ সময়ে উপস্থিত ব্রহ্মগাতি গ্রামের কৃষক বিজয় কৃষ্ণ দাস সহ আরো দুই একজন কৃষক তাদের অভিমত ব্যক্ত করেন। সমলয় পদ্ধতিতে কৃষি আবাদ করা বিষয়টি এ অঞ্চলে একেবারেই নতুন। তাহলেও এই পদ্ধতিতে বোরো আবাদ করে কৃষকরা লাভবান হবে বলেই আশাবাদ ব্যক্ত করেছেন এতদঞ্চলের কৃষকগণ। ধান চাষের জন্য প্রচলিত পদ্ধতি বাদ দিয়ে একই জাতের বীজ দিয়ে ট্রেতে বীজতলা তৈরি, রাইস ট্রান্সপ্লান্টারের মাধ্যমে চারা রোপণ এবং কম্বাইন্ড হারভেস্টারের মাধ্যমে কর্তন করার পদ্ধতিই হচ্ছে ‘সমলয়’। ধান চাষে শ্রমিক সংকট নিরসন, উৎপাদনে অতিরিক্ত খরচ ও সময় বাঁচায় এ পদ্ধতি। জানা গেছে, চলতি ২০২৪-২০২৫ অর্থবছরে বোরো মৌসুমে দিঘলিয়া উপজেলার দিঘলিয়া ইউনিয়নের ব্রহ্মগাতী গ্রামে ৫০ একর জমিতে ৬০০ কেজি উচ্চ ফলনশীল বোরো ধানের বীজ দিয়ে ৪ হাজার ৫০০ প্লাস্টিকের ট্রেতে ধানের বীজ বপন করা হয়েছে। জমির উপরিভাগের মাটির সাথে জৈব সার সংমিশ্রণে প্লাস্টিকের ট্রেতে ধান বীজ বপন করা হয়। ২০ থেকে ২৫ দিনের মধ্যে এই বীজ চারা রোপণের জন্য উপযোগী হয়ে ওঠে। এতে করে বাড়তি সারের প্রয়োজন হয় না। ট্রেতে চারা উৎপাদনে জমির পরিমাণ কম লাগে। রাইস ট্রান্সপ্লান্টার মেশিন দিয়ে চারা একই গভীরতায় সমানভাবে লাগানো যায়। ফলে ফলনও বৃদ্ধি পায়। একসঙ্গে চারা রোপণ করায় ধান একসঙ্গে পাকে এবং তা একসঙ্গে কম্বাইন্ড হারভেস্টারের মাধ্যমে কর্তন করায় কৃষকরা ফসল ঘরে তুলতে পারে। বিষয়টি তাদের জন্য নতুন হলেও উপজেলা কৃষি অফিস থেকে এ ব্যাপারে প্রশিক্ষণ দেওয়ার পর তাদের মধ্যে ব্যাপক আগ্রহ সৃষ্টি হয়েছে। এতে শ্রমিক সংকট নিরসন হওয়ার পাশাপাশি সময় ও খরচ এবং রোগবালাইও কম হয় বলে জানান তারা। বক্তব্যে উপজেলা কৃষি অফিসার মোঃ কিশোর আহমেদ বলেন, আমরা শুরুতে এই চাষে কৃষক খুঁজে পাচ্ছিলাম না। পরবর্তীতে সমলয় পদ্ধতি নিয়ে তাদের সাথে বিস্তর আলোচনার পর তারা আগ্রহী হয়। পরে বিষয়টি আমার ঊর্ধতনদের সাথে কথা বলে এই সময় চাষের কাজ শুরু করি। স্থানীয় কৃষকদের কাছে নতুন হলেও এ নিয়ে এখন ব্যাপকভাবে তাদের মাঝে সাড়া ফেলেছে বলে জানান উপজেলা কৃষি অফিসার।প্রথম বীজতলা তৈরিতে চ্যালেঞ্জের সম্মুখীন হলেও তা ভালো ও সুন্দরভাবে সম্পন্ন হয়েছে। আমরা নিয়মিত মাঠ মনিটরিং করছি। কোনো সমস্যা পেলেই দ্রুত সমাধানের ব্যবস্থা করছেন বলেও জানান এই উপজেলা কৃষি অফিসার। সমলয় চাষের মূল উদ্দেশ্য হচ্ছে বর্তমানে আমাদের দেশে কৃষি শ্রমিকের সংখ্যা কমে যাচ্ছে। তাই আমরা যেন কৃষি যান্ত্রিকীকরণের মাধ্যমে আমাদের ফসলের আবাদ ও উৎপাদন বৃদ্ধি করতে পারি, সে কারণেই কৃষকদের মাঝে সচেতনতা তৈরি করা। এ পদ্ধতিতে ধান বীজতলা করা হয় যন্ত্রের মাধ্যমে। এছাড়াও ধান রোপণ করা হয় রাইস ট্রান্সপ্লান্টারের মাধ্যমে এবং তা কম্বাইন্ড হারভেস্টারের মাধ্যমে কর্তন করা হয়।
Leave a Reply