সোহেল খান দূর্জয় নেত্রকোনা: নেত্রকোনার হাওর পাড়ের মানুষের রাজধানী নামে পরিচিত মোহনগঞ্জ উপজেলা। উপজেলা শহর থেকে পূর্বদিকে তিন কিলোমিটার দূরে বাহাম গ্রাম। যে গ্রামে ১৯০০ সালের ১৯ জুলাই জন্ম করেছিলেন সংগীতের এক মহাপুরুষ। সংস্কৃতি চর্চার লক্ষ্যে তার স্মরণে সেই বাহাম গ্রামে নির্মিত হয়েছে শৈলজারঞ্জন মজুমদার সাংস্কৃতিক কেন্দ্র। এই প্রকল্পে রয়েছে ৩ তলা বিশিষ্ট একাডেমিক ভবন, এম্ফিথিয়েটার, কনফারেন্স হল, গ্রন্থাগার, জাদুঘর, সবুজ চত্ব্বর ও পুকুর-সংবলিত একটি অত্যাধুনিক সাংস্কৃতি কেন্দ্র। ৩৯ কোটি ৬০ লাখ টাকা ব্যয়ে ২ দশমিক ২০ একর জমিতে সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের অধীনে গণপূর্ত বিভাগের বাস্তবায়নে নির্মাণকাজ সম্পন্ন হয়েছে। তবে সেখানেও থেমে নেই লুটপাটের এই উৎসব। সরেজমিনে গিয়ে দেখা গেছে এমন চিত্র।যা ছিল ধারণার বাইরে। এদিকে মোহনগঞ্জে নির্মাণ করা হয়েছে দৃষ্টিনন্দন শিশু পার্ক। প্রায় ১৯ কোটি ৪৪ লাখ টাকা ব্যয়ে প্রকল্পটির নির্মাণ কাজ শেষ হয়েছে মোহনগঞ্জসহ আশপাশের বিভিন্ন উপজেলার হাজার হাজার শিশুর সুস্থ আনন্দ-বিনোদনের সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে। আর পৌরসভার এ উদ্যোগ ঘিরে শিশু-কিশোর-বয়স্কদের সুস্থ চিত্তবিনোদন ও মননশীলতার বিকাশের স্বপ্ন দেখেছেন জেলাবাসী। এতেও ফুটে উঠেছে সেই উন্নয়নের নামে লুটপাটের মহোৎসব। এদিকে শেয়ালজানি খালের উন্নয়ন প্রকল্পের কাজ শেষ হলেও উঠেছে নানা দুর্নীতির অভিযোগ। খালটিকে নান্দনিক করে গড়ে তোলার কথা থাকলেও বাস্তবে রয়েছে ধস, আবার কোথাও ফাটল। নিম্নমানের সামগ্রী ব্যবহার এখন কর্তৃপক্ষের গাফিলতিকে দুষছেন স্থানীয়রা। যদিও পানি উন্নয়ন বোর্ডের দাবি, প্রকল্পের পাশে এলজিইডির ড্রেনের কাজ হওয়ায় ধস নেমেছে ব্লকে। ২০১৬ সালে দখলমুক্ত খালাটির উন্নয়নে আওয়ামী লীগ সরকার ১৬ কোটি টাকা বরাদ্দ দেয়। যেই কাজ শেষ হয়েছে ২০১৮ সালের সেপ্টেম্বরে। তখন পানি উন্নয়ন বোর্ডের আওতায় এই কাজ পায় ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান ভাওয়াল কনস্টাকশন।প্রকল্পের আওতায় পুনরায় খাল খনন, ফুটওভার ব্রিজ নির্মাণ, নান্দনিক ওয়াক ওয়ে থাকার কথা থাকলেও বাস্তবে তার দেখা মেলেনি। বরং তখন বছর না ঘুরতেই দেখা দেয় ব্লক ধস,আবার কোথাও ফাটল আর উঁচুনিচু। স্থানীয়দের অভিযোগ নিম্নমানের সামগ্রী ব্যবহারের ফলেই এই বেহাল দশা এখনো। তবে নিজেদের গাফিলতি আর ঠিকাদারের অনিয়মের কথা মানতে নারাজ পানি উন্নয়ন বোর্ড। তাদের দাবি,এলজিইডির ড্রেনের কাজ হওয়ায় ব্লকে ধস নেমেছে। এখন স্থানীয়রা বলছেন, ব্লক ধসের ফলে বসতবাড়ি আর শিশুদের নিয়ে দিন কাটছে আতঙ্কে। মোহনগঞ্জ উপজেলার তেতুলিয়া থেকে গাগলাজুর পর্যন্ত ৯ দশমিক ৮ কিলোমিটার হাওরের ডুবন্ত সড়ক সংস্কার কাজেও উঠেছিল অনিয়মের অভিযোগ। নির্মাণ কাজ শেষ হওয়ার আগেই ভেঙে পড়েছিল সড়ক। তখন হাওরের মানুষের জীবনমান উন্নয়ন প্রকল্পের আওতায় ২০১৬-১৭ অর্থ বছরে দরপত্র আহ্বান করেছিল মোহনগঞ্জ উপজেলা প্রকৌশল বিভাগ এলজিইডি। তখন দরপত্রে সর্বোচ্চ দরদাতা হিসেবে কাজ পায় মেসার্স সাহাব উদ্দিন ও সমীর চৌধুরী নামে দুইটি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান। তখন এই কাজের ব্যয় নির্ধারণ করা হয় ৩ কোটি ২২ লাখ টাকা। কিন্তু তাতেও পিছু ছাড়েনি উন্নয়নের নামে লুটপাটের মহোৎসব। আরো অভিযোগ উঠেছে মোহনগঞ্জ উপজেলার চরহাইজদা ফসলরক্ষা বাঁধ মেরামতে প্রকল্প বাস্তবায়ন কমিটির (পিআইসি) সভাপতির বিরুদ্ধে। পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) অধীনে গঠিত ১৭ নম্বর প্রকল্পের পিআইসির সভাপতি মো. কুতুবউদ্দিন। তিনি জুক্কা নামক স্থানে মূল বাঁধের পাশে থেকেই মাটি কেটে মেরামত কাজ করেছেন।খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, বাঁধ নির্মাণেও মো. কুতুবউদ্দিন পাউবোর নীতিমালা না মেনেই কাজ করেছেন। তিনি নিজের ইচ্ছামতো এক্সকাভেটর মেশিন দিয়ে বাঁধের গোড়া থেকেই মাটি কেটে মেরামতের কাজ করেছেন। পাউবো সূত্রে জানা গেছে, পাউবো থেকে ৪ কোটি ৪০ লাখ টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয় এসব প্রকল্পে।সরেজমিনে গিয়ে দেখা গেছে পাউবোর বেঁধে দেওয়া নীতিমালা অনুযায়ী মূল বাঁধের অন্তত ১০০ ফুট দূরে মাটি কাটার কথা থাকলেও তারা ক্ষমতার জোরে এখান থেকে করেছেন লুটপাট। আর এসব প্রকল্পের উন্নয়ন কাজ সরেজমিনে পরিদর্শন করতেন সাবেক এমপি সাজ্জাদুল হাসান। তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য ১নং ইউনিয়নের বাহাম গ্রামে নির্মাণাধীন শৈলজারঞ্জন মজুমদার সাংস্কৃতিক একাডেমি, ৬নং ইউনিয়নের আদর্শনগরে হাওর পর্যটন কেন্দ্র, পৌরসভার ৬নং ওয়ার্ডের সাতুর গ্রামে প্রস্তাবিত বর্জ্য ব্যবস্থাপনাগারের স্থান, শিয়ালজানি খাল, পৌরসভার ১নং ওয়ার্ডের পৌর শিশুপার্ক, ট্রাকস্ট্যান্ড, বাসস্ট্যান্ড, ভূগর্ভস্থ পানিশোধাগার, উপজেলা পরিষদের পাশে ৫০০ আসন ব্যবস্থাবিশিষ্ট আধুনিক অডিটোরিয়াম,পৌর শহরের মধ্য বাজারে অবস্থিত মৎস্য অবতরণ কেন্দ্র এবং রেলওয়ে স্টেশনের চলমান উন্নয়ন কাজসহ আরো কয়েকটি উন্নয়নমূলক কাজের অগ্রগতি পরিদর্শন করেন। এছাড়াও রেলওয়ে স্টেশনের উন্নয়ন,রাস্তার নির্মাণকাজ,একটি রেলওয়ে কাঁচাবাজার নির্মাণ,পৌরসভার সামনে থেকে পাইলট স্কুলের সম্মুখ পর্যন্ত একটি ফুটওভার ব্রিজ নির্মাণ সহ বিভিন্ন প্রকল্পের উন্নয়নের নামে হয়েছে মহা লুটপাট।আর এসবের নেতৃত্ব দিয়েছিলেন সাবেক এমপি সাজ্জাদুল হাসান নিজেই।আরো জানা গেছে তিনি নিজেই ছিলেন সকল কাজের তদারকিতে,আর উন্নয়নের নামে লুটে নিয়েছেন শত শত কোটি টাকা। আরো জানা যায় এতো দিন তার ক্ষমতার জোরে কেউ থাকে ভয়ে কিছু বলতে সাহস পাইনি। তিনি এতটাই ক্ষমতাধর ব্যক্তি ছিলেন।
Leave a Reply