মো. ইসমাইলুল করিম স্টাফ রিপোর্টার: তিন মাসের বেশি সময় পর আবারও বাংলাদেশের উখিয়া ও নাইক্ষ্যংছড়ি সীমান্তের ওপারে মিয়ানমার অংশ থেকে ভেসে আসছে বিস্ফোরণের শব্দ। গত কয়েক মাস কেবল টেকনাফ সীমান্তের এপারেই শোনা যেত মর্টার শেল, বোমা, গ্রেনেড ও গুলির শব্দ। গত মঙ্গলবার দুপুরের পর থেকে বুধবার সকাল পর্যন্ত উখিয়া-নাইক্ষ্যংছড়ির বাসিন্দারা বিস্ফোরণের শব্দ শুনতে পান। স্থানীয়রা ধারণা করছেন, মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে সরকারি বাহিনীর সঙ্গে সশস্ত্র গোষ্ঠী আরাকান আর্মির মধ্যে চলমান যুদ্ধ ব্যাপক এলাকা জুড়ে শুরু হয়েছে। এ কারণেই টেকনাফের পাশাপাশি উখিয়া ও নাইক্ষ্যংছড়িতে ভেসে আসছে সেই শব্দ। সীমান্ত এলাকার বাসিন্দারা জানিয়েছে, মঙ্গলবার দুপুর থেকে শুরু হয়ে বধবার সকাল ১০টা পর্যন্ত থেমে থেমে বিকট শব্দ শুনেছেন নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলার ঘুমধুম ও উখিয়া উপজেলার পালংখালী ইউনিয়নের সীমান্ত সংলগ্ন এলাকার মানুষ। একই সঙ্গে মঙ্গলবার রাত ১টা থেকে বুধবার দুপুর ১টা পর্যন্ত টেকনাফ সীমান্তের হ্নীলা, পৌরসভা, টেকনাফ সদর ও সাবরাং ইউনিয়নের মানুষও বিকট বিস্ফোরণে আওয়াজ পেয়েছেন। পালংখালীর বাসিন্দা লুৎফর রহমান বলেন, ওপারে সংঘাতের কারণে অযথা সীমান্তে না যেতে আমাদের নির্দেশ দিয়েছেন আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা। ঘুমধুমের বাসিন্দা হামিদুল হক বলেন, মঙ্গলবার দুপুর থেকে রাত পর্যন্ত থেমে থেমে মর্টার শেল ও ভারি বোমার শব্দ পেয়েছি। মিয়ানমার থেকে ৬৫ জন চাকমা ও তঞ্চঙ্গ্যা সম্প্রদায়ের মানুষ পালিয়ে বাংলাদেশে প্রবেশের একদিন পর আমরা আবার তীব্র শব্দ পাচ্ছি। অর্থাৎ ওপারে যুদ্ধ তীব্র হয়েছে। ফলে এপারের মানুষ ভয়ের মধ্যে রয়েছেন। পালংখালী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান এম. গফুর উদ্দিন চৌধুরী বলেন, টানা ৩ মাস এ অঞ্চলে শব্দ পাওয়া যায়নি। নতুন করে আতঙ্ক শুরু হওয়ায় সীমান্তের বাসিন্দাদের খোঁজ রাখছি আমরা। টেকনাফের সাবরাং ইউনিয়ন পরিষদের পাঁচ নম্বর ওয়ার্ডের সদস্য মোহাম্মদ শরিফ বলেন, গত কয়েকদিন ধরে মিয়ানমার সীমান্তবর্তী টেকনাফের বাসিন্দারা কিছুটা স্বস্তিতে ছিল। হঠাৎ গতরাত থেকে আবারও বিস্ফোরণের শব্দে বাসিন্দাদের মধ্যে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। এভাবে আর কতদিন চলবে জানা নেই। হ্নীলার ইউপির চেয়ারম্যান রাশেদ মাহমুদ আলী, টেকনাফ সদরের জিয়াউর রহমান ও সাবরাং ইউপির চেয়ারম্যান নুর হোসেন জানান, বিস্ফোরণের বিকট শব্দে এলাকার বাসিন্দাদের ঘরবাড়ি কেঁপে উঠছে। সীমান্তের লোকজন শান্তিতে ঘুমাতে পারছে না। বিশেষ করে, শিশু ও বয়স্কদের নিয়ে বিপাকে পড়তে হচ্ছে। বিভিন্ন গণমাধ্যম এবং মিয়ানমারের সীমান্তবর্তী এলাকার মানুষের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, টানা ১০ মাসের বেশি সময় ধরে রাখাইন রাজ্যে সরকারি বাহিনীর সঙ্গে লড়ছে আরাকান আর্মি। এরই মধ্যে আরাকান আর্মি মংডু শহরের আশপাশে দেশটির সীমান্তরক্ষী বাহিনী বর্ডার গার্ড পুলিশের (বিজিপি) বেশ কিছু সীমান্তচৌকি দখলে নিয়েছে। এখন মংডু টাউনের ভেতরে সেনাবাহিনী ও বিজিপির দুটি ব্যাটালিয়ান দখলের চেষ্টা চালাচ্ছেন আরাকান আর্মির সদস্যরা। এ দুটিতে প্রায় পাঁচ হাজারের মতো সৈন্য রয়েছে। এতে আরাকান আর্মির বিরুদ্ধে সরকারির বাহিনীর পক্ষে যুদ্ধে অংশ নিচ্ছে রোহিঙ্গা স্বশস্ত্র গোষ্ঠিগুলোও। এরই মধ্যে নতুন করে ঘুমধুম বাইশফাঁড়ি সীমান্ত দিয়ে মিয়ানমার থেকে পালিয়ে চাকমা ও তঞ্চঙ্গ্যা পরিবারের ৬৫ সদস্য অনুপ্রবেশ করেছে। তাদের কুতুপালং সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে প্রশাসনের নিরাপত্তা হেফাজতে রাখা হয়েছে। অন্যদিকে, গত ১২ নভেম্বর টেকনাফ থেকে নির্মাণ সামগ্রী নিয়ে সেন্ট মার্টিন যাওয়ার পথে দুটি ট্রলারের সাত মাঝি-মাল্লা উধাও হয়েছেন বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। যদি বিষয়টি স্বীকার করেননি আরাকান আর্মি। বিজিবির টেকনাফ-২ ব্যাটলিয়নের অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল মহিউদ্দিন আহমেদ জানিয়েছেন, বিয়ষটি নিয়ে আরাকান আর্মির সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তারা অস্বীকার করেছে। যদিও এখন পর্যন্ত ওই মাঝিমাল্লাদের কোনও খোঁজ পাওয়া যায়নি।একই সঙ্গে গত ১৩ নভেম্বর উখিয়ার নাফনদী সীমান্ত থেকে মাছ ধরার সময় পাঁচ জেলেকে আরাকান আর্মি ধরে নিয়ে যাওয়ার পর এক জনের মরদেহ উদ্ধার হলেও এখনও হদিস নেই বাকি চার জনের।
Leave a Reply