হাবিবুর রহমান নেত্রকোনা: গাছ মানুষের পরম বন্ধু। গাছ পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষা করে ও আর্থিকভাবে উপকার করে। কিন্তু সেই গাছের সঙ্গেই করা হচ্ছে নিষ্ঠুর আচরণ। জীবন্ত গাছে পেরেগ মেরে সাটানো হচ্ছে ব্যানার ফেস্টুন।এরকমই প্রতিযোগিতা দৃশ্যায়িত হয়েছে নেত্রকোনায় সর্বত্র। হাট-বাজার, রাস্তা মোড়সহ সর্বত্র একই অবস্থা। প্রতিটি রাস্তার পাশে এ দৃশ্য বেশি। বিভিন্ন রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক ব্যানার ফেস্টুনে ছেয়ে গেছে নেত্রকোনা জেলার প্রতিটি এলাকা। জেলার সবকয়টি সড়কে পাশে গাছে গাছে ঝুলছে বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান, চিকিৎসক ও বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতাকর্মীদের প্রচার-প্রচারণার অসংখ্য সাইনবোর্ড-ব্যানার ও ফেস্টুন। এগুলে ঝোলানো হয়েছে পেরেক ঠুকে। একেকটি গাছ যেন একেকটি বিজ্ঞাপন বোর্ড। এভাবে গাছে পেরেক ঠোকা হচ্ছে, অথচ তা দেখার কেউ নেই। এমনভাবে ছেয়ে গেছে যে কোনটা কোন গাছ, তা চেনার উপায় থাকে না। পরিবেশবিদদের মতে, পেরেক লাগানোর কারণে গাছের গায়ে যে ছিদ্র হয়, তা দিয়ে পানি ও বিভিন্ন ব্যাকটেরিয়া ও অণুজীব ঢোকে। এতে গাছের ওই জায়গায় দ্রুত পচন ধরে। ফলে তার খাদ্য ও পানি শোষণপ্রক্রিয়া ব্যাহত হয়। এতে গাছ মারাও যেতে পারে। তাই গাছে পেরেক ঠোকা গাছের জন্য চরম ক্ষতি। যেখানে বেশি করে গাছ লাগানো এবং পরিচর্যা করা প্রয়োজন, সেখানে আমরাই উল্টো গাছের ক্ষতি করে চলেছি। এভাবে গাছে পেরেক ঠুকে সাইনবোর্ড না লাগানোর বিষয়ে ২০০২ সালের ৭ জুলাই জাতীয় সংসদে একটি আইন পাস হয়। কিন্তু শুধু কাগজপত্রেই আইনটি আছে। বাস্তবে এর কোনো প্রয়োগ নেই। এই আইনটি সম্পর্কে সবাইকে জানাতে হবে এবং এর প্রয়োগ ঘটাতে হবে। গাছ রক্ষায় প্রয়োজনে আরও কঠোর আইন প্রণয়ন করতে হবে। না হলে গাছের গায়ে পেরেক ঠোকা কখনোই বন্ধ হবে না। গাছে পেরেক ঠুকে সাইনবোর্ড না লাগানোর বিষয়ে ২০০২ সালে জাতীয় সংসদে একটি আইন পাস হয়। কিন্তু শুধু কাগজপত্রেই আইনটি আছে। বাস্তবে এর কোনো প্রয়োগ নেই। সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ পদক্ষেপ না নেয়ায় গাছের ওপর মানুষের অত্যাচার থামছে না দাবি নাগরিক সমাজের। তাই জনসচেতনতা তৈরি পাশাপাশি গাছ রক্ষার প্রয়োজনে এই আইনটি দ্রুত কার্যকর করার দাবি তাদের। পরিবেশবিদ ইব্রাহিম বলেন, ব্যবসা প্রতিষ্ঠান ও রাজনৈতিক দলের প্রচারণাসহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের বিজ্ঞাপনের জন্য গাছ ব্যবহার করা বন্ধ করতে হবে। কোনোভাবেই পেরেক ঠোকা চলবে না। একই কথা বলেছেন বারহাট্টা প্রেসক্লাবেরর প্রতিষ্ঠাতা সাধারণ সম্পাদক ফেরদৌস আহমাদ বাবুল। তিনি বলেন, গাছে পেরেক ঠুকে সাইনবোর্ড না লাগানোর আইনটি সম্পর্কে সবাইকে জানাতে হবে এবং এর প্রয়োগ ঘটাতে হবে। গাছ রক্ষায় প্রয়োজনে আরও কঠোর আইন প্রণয়ন করতে হবে।তিনি আরো বলেন, গাছে পেরেক মেরে বিজ্ঞাপন টাঙানো বন্ধ করতে বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলন (বাপা) এর উদ্যোগে স্থানীয়ভাবে জনসচেতনতা তৈরি করতে হবে। তিনি আরো বলেন, এসব বিষয়ে প্রশাসনিক তৎপরতা বাড়ানো প্রয়োজন। এদিকে জেলায় প্রতিটি সড়কের পাশে সরকারি গাছে পেরেক ঠুকে লাগানো হচ্ছে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের বিজ্ঞাপন ও রাজনৈতিক ফেস্টুন। এতে সড়কের গাছগুলো মরে যাওয়ার আশঙ্কা করা হচ্ছে। সাম্প্রতি জেলার বিভিন্ন বাজার ও পরিষদের সামনে উপজেলা চত্বর, সড়কসহ বিভিন্ন সড়ক ঘুরে দেখা গেছে, সড়কের পাশে গাছে গাছে ঝুলছে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান ও রাজনৈতিক নেতাদের প্রচারণার অসংখ্য ফেস্টুন। ফেস্টুনগুলো বড় বড় পেরেক দিয়ে গাছে আটকানো হয়েছে। এ বিষয়ে আয়ুর্বেদিক চিকিৎসক ডা. মো. ওবায়দুল খান বলেন, গাছে পেরেক ঠোকানোর ফলে গাছের গায়ে যে ছিদ্র হয়, তা দিয়ে পানি ও এর সঙ্গে বিভিন্ন ব্যাকটেরিয়া, ছত্রাক ও অণুজীব ঢোকে। এতে গাছের ক্ষতস্থানে মরিচা ধরে আস্তে আস্তে পচনের সৃষ্টি হয়। ফলে তার খাদ্য ও পানি শোষণপ্রক্রিয়া ব্যাহত হয়। পরে ঝড়-বৃষ্টিতে সহজেই গাছ ভেঙে যায়। এভাবেই একসময় গাছটি মারা যায়। নেত্রকোনা জেলা প্রশাসক বনানী বিশ্বাস বলেন, আমি আপনার কাছে প্রথম শুনলাম। আমাকে বিস্তারিত লিখে দিন, পরে দেখতেছি। তিনি বলেন, আমাদের মতো গাছেরও একটা প্রাণ আছে। তাই পরিবেশ ও গাছ রক্ষায় আমাদের সবাইকে সচেতন হতে হবে। আর যেন কোনো প্রতিষ্ঠান বা রাজনৈতিক নেতার ফেস্টুন গাছে না লাগানো হয় শিগগিরই আমি তার ব্যবস্থা নেবো।
Leave a Reply