চট্টগ্রাম প্রতিনিধি:- চট্টগ্রামের পটিয়া পৌরসভা মেয়র ও সচিব-এর স্বাক্ষর জালকোটি টাকার মালিক বনে গেছেন পিয়ন নাজিম উদ্দিন। এই টাকায় সে গড়ে তুলেছে একটি তিনতলা বিলাস বহুল বাড়ি। তার রয়েছে একটি প্রাইভেট কার ও ৬টি পিকআপ। ৮ বছরে জালিয়াতি করে সে পৌরসভা থেকে হাতিয়ে নিয়েছে প্রায় ২০ কোটি টাকা। জালিয়াতির বিষয়টি ধরা পড়লেও যুবলীগের সাথে জড়িত থাকায় তার বিরুদ্ধে কোন মামলা হয়নি। ১২ বছর পর গত ২৮ নভেম্বর এসএম রেজা রিপন নামের এক ঠিকাদার পৌর মেয়রের দায়িত্বরত ইউএনও আলাউদ্দীন ভূইয়া জনীর কাছে উক্ত পিয়নের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য লিখিত আবেদন জানিয়েছেন। অভিযোগ সূত্রে জানা যায়, ২০০৫ সালে অষ্টম শ্রেণি পাশ নাজিম উদ্দিন পটিয়া পৌরসভার পিয়নের চাকরি পায়। ২০১২ সালে পটিয়া উপজেলা আ.লীগের সাধারণ সম্পাদক ও পৌর মেয়র অধ্যাপক হারুনুর রশিদ নাজিম উদ্দিনকে পৌরসভার সহকারী হিসাবরক্ষক হিসেবে নিয়োগ দেয়। পরে কয়েকজন ঠিকাদারের অভিযোগের ভিত্তিতে তাকে সহকারী হিসাবরক্ষক থেকে সরিয়ে কর আদায়কারী হিসেবে পদায়ন করে। এ সময় সে মেয়র ও সচিব-এর স্বাক্ষর জাল করে পটিয়া পৌরসভার নামে সোনালী ব্যাংক ও রুপালী ব্যাংকে পৃথক দুইটি একাউন্ট খোলেন। ঠিকাদারসহ প্রতিষ্ঠানের বিভিন্ন দপ্তরে টাকা জমা দিতেন উক্ত নাজিম উদ্দিন। অধিকাংশ টাকা পৌরসভার রুপালী ব্যাংক একাউন্টে জমা না দিয়ে তার খোলা একাউন্টে জমা রাখতেন। এই সুযোগ নিয়ে পৌরসভার কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের প্রভিডেন্ট ফান্ড ও ভবিষ্যত তহবিলের টাকা আত্মসাত, পৌরসভার তালিকাভুক্ত ঠিকাদারদের পাওনা চেক কৌশলে নিয়ে অবৈধভাবে উত্তোলন, সরকারি বিভিন্ন বরাদ্ধের টাকা ট্রেজারি থেকে প্রতারণার মাধ্যমে তুলে নিয়ে আত্মসাত, ঠিকাদারী ফাইল-এর ভ্যাট, আয়কর ভূয়া চালানের মাধ্যমে কৃত্রিম ভাউচার বানিয়ে সরকারি খাতে জমা না দিয়ে প্রতারণার মাধ্যমে লাখ লাখ টাকা উত্তোলন করে আত্মসাত করেন। পৌরসভার ফান্ডের অসহায় ও দরিদ্রদের জন্য বরাদ্ধকৃত টাকা ভূয়া চেকের মাধ্যমে আত্মসাত করে। এভাবে প্রায় ৮ বছর ধরে টাকা আত্মসাত করার পর ২০১৯ সালে তার টাকা আত্মসাৎ ও স্বাক্ষর জালিয়াতির বিষয়টি ধরা পড়ে। তখন পৌর মেয়র অধ্যাপক হারুনুর রশিদ তাকে পৌরসভা থেকে বহিস্কার করেন। যুবলীগের সাথে সংশ্লিষ্টতা থাকায় মেয়র পিয়ন নাজিমের বিরুদ্ধে মামলা করেনি। পরে সে এলাকা ছেড়ে পালিয়ে যায়। এসব টাকা হজম করতে সে চট্টগ্রাম নগরীর জিইসি স্ট্যান্ডার্ড চাটার্ড ব্যাংক শাখায়, পটিয়া ইউসিবিএল ব্যাংক, সোনালী ব্যাংক, পূবালী ব্যাংক, ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংক শাখায় ভিন্ন একাউন্ট খোলে। সেখানে আত্মসাত কৃত টাকা জমা রাখেন। পরবর্তীতে ঐ টাকায় পৌরসভার বাহুলী এলাকায় নাজিম তিন তলা বিশিষ্ট একটি বিলাস বহুল পাকা ভবন নির্মাণ করেন। ঠিকাদার এসএম রেজা রিপন জানান, পিয়ন নাজিম উদ্দীন ঠিকাদারদের টাকাসহ পৌরসভার প্রায় ২০ কোটি টাকা আত্মসাত করেছে। এ প্রসঙ্গে মেয়রের দায়িত্বরত ইউএনও আলাউদ্দিন ভূঁইয়া জনি জানান, নাজিম উদ্দীনের বিরুদ্ধে অভিযোগ তদন্ত চলছে। তদন্ত শেষে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
Leave a Reply